দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যার একটি যানজট। উৎসটি বেপরোয়া গাড়ী চলাচল। সমগ্র ট্রাফিক ব্যবস্থাটি ভেঙ্গে দিয়েছে বড় গাড়ীর চালকেরা। রাস্তার আইন মানেনা কেউ। দোষটি শ্রমিকদের হলেও চাপটি আসে মালীকদের কাছ থেকেই । অধিক লাভের আশায় মালীকরাই নির্দেশনা দেয় কিভাবে গাড়ী চালাতে হবে। ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রন করে শ্রমীকদের, বিনিময়ে চাঁদা আদায় করে শ্রমিকদের কাছ থেকে। কোটি কোটি টাকা আদায় হয় শ্রমিক ইউনিয়নের নামে। সেবা দেওয়ার নামে নিত্য আদায়কৃত অঢেল অর্থ শ্রমিকদের উন্নয়ন করেনি, নেতাদের উন্নতি হয়েছে বটে। নেতাদের জৌলুস দেখে ঈর্ষান্বিত হন বিত্তশালীরাও । নির্ধারীত নিয়মে সকলের জ্ঞাতসারেই অবর্ণনীয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। মালীক সমিতির যোগসাজোসেই শ্রমিক নেতারা বিত্তশালী। অনেক নেতাও এখন মালীক বনে গেছেন। একদিকে শ্রমিক নেতা আবার নিজেরাই মালিক। তাদের হাত অনেক লম্বা, কেউ তাদের কিছু করতে পারেনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলেই দেশব্যাপী ধর্মঘটের হুমকি দেয়, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অচল করে দেয় দেশব্যাপী। এই সংগঠনগুলির শক্তি শ্রমিক সেই শ্রমিকরাই অবহেলিত। শ্রমিকদের নামে নেতারা হুংকার দেন, অর্থ আদায় করেন নিজেদের জন্য। এই দুর্যোগে মাসাধিকাল ধরে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে, গাড়ী চলাচল করতে পারেনি। শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে অনাহারে দিনযাপন করেছে আর সাহায্যের জন্য মালিক সমিতির কাছে আবেদন নিবেদন করেছে, সাড়া পায়নি কোন। এখন ঈদ মৌসুমে আবার গাড়ী চালাতে উদ্যোগী হয়েছে মালিকেরা। ডাক পরেছে শ্রমিকদের। ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়েছে সাঈদাবাদ বাস টার্মিনালে, তারা বিক্ষোভ করেছে। জানতে চেয়েছে নিত্য আদায়কৃত চাঁদার টাকা কোথায় গেল? এই দূর্যোগে সমিতি আর নেতারা এগিয়ে এলোনা কেন? এই যৌক্তিক দাবীর পক্ষে মালিক বা ইউনিয়নের নেতারা সাড়া দেয়নি। তারা জানে কিভাবে দালাল দিয়ে শ্রমিকদের শীতল করতে হয়। কিছুদিন লেখালেখিও হবে হয়ত, সংবাদ বেরুবে তারপর আবার থেমে যাবে সব। শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার আসলে কেউ নেই দেশে, শ্রমিক নেতারাওনা। এরা সর্বকালেই নির্যাতিত হয়েছে হবেও। অথচ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শ্রমিকরাই প্রাণ দিয়েছে বেশী। এই শ্রমিকদেরকে ব্যবহার করে নেতারা সর্বগ্রাস করে চলেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইউনিয়নের নেতারা সানন্দে অবসর যাপন করে। শ্রমিকদের জীবন বদলায়নি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও। মে মাসে শ্রমিক দিবসে বাংলাদেশের শ্রমিকদের এমন দুরবস্থা দেখে মনে হয়, ইউনিয়ন গঠনে বাস্তবভিত্তিক পুনর্গঠন প্রয়োজন হয়ে পরেছে। শ্রমিক আন্দোলনের বদলে শ্রমিক কল্যানের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন এখন। মালিক সমিতিকেও শ্রমিকদের সার্থ বিবেচনা করতে হবে আপদকালীন সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করার জন্য। আর্থিক বিষয়টি স্বচ্ছ না হলে একশ্রেনীর নেতার হাতে বন্দি হয়ে পরবে শ্রমিক সংগঠনগুলি। যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে শ্রমিক সংগঠনের পুনর্বিন্যাস একান্তভাবে জরুরী। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পুরুন না করে দেশের যোগাযোগের মত বৃহত্তম রাজস্ব খাতটির উন্নয়ন সম্ভব হবেনা। মালিক পক্ষ এখন উভয় দিক থেকেই সুবিধা ভোগ করছে শ্রমিক সংগঠনের সহায়তায়। মালিকরাই এখন শ্রমিক নেতা, শ্রমিকরা অবহেলিত।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
৮ মে ২০২০।