কোভিড-১৯ এর কারনে গার্মেন্টস বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছিল। গার্মেন্টসের মালীকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে সরকারের কাছ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা আদায় করেছেন এবং বলেছেন তাদের সব কন্ট্রাক্ট বাতিল করায় ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাওনা মজুরীও আন্দোলন করে নিতে হয়েছে। সংক্রমনের ভয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষনা করলেও এখন আবার খুলে দেওয়া হচ্ছে। কট্রাক্ট বাতিল হলে কোন ভরসায় গার্মেন্টস মালীকরা কারখানা খুলে দিলেন তা বোধগম্য নয়। তাহলে কি আবারও কোন প্রনেদনা প্রাপ্তির আশা করছেন গার্মেন্টস মালীকরা?
বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালীকরা ধনী এবং নানা ভাবে অর্থ উপার্জন করছেন তারা। ব্যংকের টাকাও বেশীরভাগ তারাই তুলেছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে জনগনের সেবায় গার্মেন্টস মালীকদের কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি। সাধারন মানূষকে গৃহে বন্দি রেখে এই দুর্যোগে গার্মেন্টস খুলে মালীকরা শুধু মুনাফাই পেতে চাইছে। করোনা সংক্রমন কমেনি এবং পৃথিবীর কোথায়ও এখনো করোনামূক্ত ঘোষিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কোভিড-১৯ কে ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমীকরা কাজে ফিরতে চায় কিন্তু, এই ফেরা যদি সংক্রমনকে বৃদ্ধি করে দায়িত্বটি কে নিবে, সরকার না গার্মেন্টসের মালীক? এমন ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগে বিষটি বিশ্লেষন করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। বাংলাদেশে যদি ইউ এস বা ইটালীর মত সংক্রমন ছড়িয়ে পরে তা হবে বিপদজনক। ইতিমধ্যেই চাল চুরির ঘটনায় দেশের মানূষ স্তম্ভিত হয়ে পরেছে। এমন মানবিক দুর্যোগেও যারা চাল চুরির মত অপকর্ম করতে পারে, তারা সব কিছুই করবে স্বার্থের প্রয়োজনে। দুর্যোগ নিয়ে রাজনীতি নয় বরং রাজনীতিকে দুর্যোগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারলেই দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। সরকারের প্রণোদনা কারো জন্য উপঢৌকন হবে তা কোনভাবেই কাম্য নয়।
জাতীয় দুর্যোগে কেউ কেউ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালায়। রাজনীতিতেও এখন অপচেষ্টা চলছে সুযোগ নেওয়ার। সোশাল মিডিয়াতে প্রতিদিন যে সব খবর প্রচারিত হয় তার সবটাই অমুলক নয়। মানূষ ফুসে উঠছে নানা কারনে। দেশের ভিক্ষুক যখন মানূষের কল্যানে জমানো সমুদয় অর্থ তুলেদেয় ত্রান তহবিলে তখন স্বার্থ হাসিলের খবর শুনে বিক্ষুদ্ধ হতেই হবে। ধনী লোকের সংখ্যা এখন বহু, কেউ কেউ নিজেরাই দাবী করেছেন একাই পদ্মা সেতু বানাতে পারেন, তারা এখন কোথায়? সময় এসেছে সামাজিক বিপ্লবের। এমন বিপ্লব শুরু হলে অনেকেরই বিপদ হবে কারন অর্থনৈতিক দুরবস্থাটি এখনো দৃশ্যমান হয়নি। বিশ্বব্যাপী দুর্ভোগ শুরু হলে মানূষ বিদ্রোহ করবেই। জনগনের শক্তিকে অগ্রাহ্য করার ভুল যেন কেউ না করে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
৪ মে ২০২০।