বৃষ্টি-বাদল পুরো দমে শুরু হবার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে মশার উপদ্রব। জনজীবন প্রায় অতিষ্ট যেন! এমনিতেই এখন চলছে করোনা মহামারী। সবাই অনেক উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে। মশার উপদ্রব বেড়ে যাবার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার খবরও কিছুটা শোনা যাচ্ছে।
আপনারা চিন্তা করুন, যেখানে করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব ভীত-সন্ত্রস্ত, সেখানে এখন যদি গতবছরের ন্যায় ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্তের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, তবে কি এই বিপদ চাইলেও সামলে নিতে পারবো আমরা? হয়তো না। তাই, আমাদের উচিত এখন থেকেই মশার উপদ্রব নিয়ে সতর্ক হওয়া।
কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে মশার যন্ত্রণা থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি আজ তারই ৫টি সহজ উপায় নিয়ে কথা তুলে ধরা হোল-
১) রসুনের স্প্রেঃ রসুনকে বলা হয় “পাওয়ার হাউজ অব মেডিসিন অ্যান্ড ফ্লেভার“। রসুনের অনেক স্বাস্থ্যকর গুণাবলী রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। তবে এটা কি জানি, রসুন পোকা-মাকড় দমনেও কার্যকরী!
শুনে অবাক হবেন যে, মধ্যযুগে ইউরোপীয়রা প্লেগ দমেও রসুনের ব্যবহার করেছিল। আর আমাদের প্রাচীন সভ্যতায়ও পোকা-মাকড় দমন করতে রসুনের ব্যবহার করা হতো।
আপনিও মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে বাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন রসুনের স্প্রে। এই রসুনের স্প্রে খুব সহজেই বানানো যায়। তার জন্য কয়েক কোয়া রসুনের খোসা ছাড়িয়ে ছেঁচে নিয়ে অল্প ১ কাপ বা ১.৫ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে দরজা, জানালা, ঘরের কোণা ইত্যাদি জায়গায় স্প্রে করুন। আশা করি মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে পারবেন।
২) তুলসির ব্যবহারঃ সাধারণত তুলসি আমরা ঠান্ডা-কাশিতে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু প্যারাসাইটোলজি রিসার্চ জার্নালের একটি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে- তুলসি মশার লার্ভা ধ্বংসে ও মশা দূর করতে অনেক কার্যকরী একটি উপাদান।
তাই, কয়েকটি তুলসি পাতা পানিতে ফুটিয়ে স্প্রে তৈরি করে নিতে পারেন। আর ঘরের বারান্দায় না হয় এক কোণে থাকলো এই মহা উপকারী গাছটি। এতে ঘরে মশা কম ঢুকবে।
৩) পুদিনার তেলঃ পুদিনা পাতাও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটিতে মেন্থল থাকায় তা ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে ও ঠান্ডায় আরাম দেয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, পুদিনার গন্ধ মশা দূর করে।
জার্নাল অব বায়োরিসোর্স টেকনোলজি এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পুদিনা পাতার মশা দূরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে। ১টি ছোট বোতলে নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল নিয়ে তাতে কয়েকটি পুদিনা পাতা থেতলে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে রাখতে হবে। ২-৩দিন পর পাতা থেকে তেল ছেঁকে নিতে হবে। আর তেল বানাতে না চাইলে উপরের ঘরে পুদিনা পাতা জ্বাল দিয়ে গরম পানির ভাপটাও দিতে পারেন। আর এই তেল মসকিউটো রিপেলেন্ট হিসেবেও কিন্তু ব্যবহার করা যাবে।
৪) লেবু ও লবঙ্গঃ হয়তো এই উপায়টি কম-বেশি সবাই জানেন। তবুও একবার চোখ বুলিয়ে নিতে তো ক্ষতি নেই। লেবু অর্ধেক করে কেটে বা চার খন্ড করে তাতে কয়েকটি লবঙ্গ গেঁথে দিন। শুধু লবঙ্গের মাথা বাহিরে থাকবে। বাকি অংশটুকু লেবুর ভেতরে থাকবে। এরপর এটি ঘরের কোণায় ও জানালার কাছে রেখে দিন। মশা দূর হবার সাথে সাথে মিষ্টি সুঘ্রাণও কিন্তু ছড়াবে!
৫) নিম তেলঃ অ্যালার্জি ও ইনফেকশনজনিত কারণে নিম তেল অনাইয়াসেই ব্যবহৃত হয়। তবে মশা বা কীট-পতঙ্গ থেকে বাঁচতে আমরা হয়তো খুব একটা নিম তেম ব্যবহার করি না। তবে এবার থেকে করুন। কারণ, নিম তেলও কিন্তু প্রাকৃতিক মসকিউটো রিপেলেন্ট। একসাথে মশা তাড়ানো আর ত্বকের যত্ন দুই-ই হয়ে যাবে! ঘরে যদি বাজারের নিম তেল থাকে তা ব্যবহার করতে পারেন। আবার নিজেও ১ কাপ নারকেল তেলে ১/৫ কাপ পরিমাণ নিম পাতা নিয়ে তা ভালো মতো জ্বালিয়ে নিতে পারেন আর স্টোর করে রাখতে পারেন।
ক্ষুদ্র একটি প্রাণী এই মশা। অথচ কী ভয়ানক শক্তিশালী! কামান-দাগা দিয়েও ধরাশায়ী করা যায় না। আমরা মশা মারার ব্যাট, মশারি, কয়েল সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত থাকি। তবুও এটি লুকিয়ে এসে এক কামড়ে বাঁধিয়ে দিয়ে যায় ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়ার মতো অসুখ। আমরা কি পারি না, আরও একটু সচেতন হতে? একটু চেষ্টা করি, বাড়ির আশেপাশে যেন পানি না জমে থাকে তা নিশ্চিত করতে, আর ঘরের ভেতর মশার উপদ্রব ঠেকাতে উপরের এই টিপসগুলো মেনে চলতে। করোনার এই ক্রান্তি লগ্নে অন্তত ডেঙ্গু না হোক শাকের করাত! সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!