করোনা ভাইরাসে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আজ শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত সারা দেশে পুলিশের ২৩৪ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকের বেশি ঢাকা মহানগরীতে।
ঢাকায় ১১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে নারী পুলিশ এবং পুলিশে কাজ করা সাধারণ কর্মচারীও আছেন। সারা দেশে ৬৫২ জন পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। এসব কাজ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীর পরে করোনায় বেশি আক্রান্ত হয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদস্যরা। এই মহানগরীতে ২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর রয়েছে গোপালগঞ্জ। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৮। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র তিনজন। তবে চট্টগ্রামে পুলিশের ২০০ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীতে আক্রান্তদের মধ্যে একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার, তিনজন উপপরিদর্শক, একজন সার্জেন্ট, পাঁচজন সহকারী উপপরিদর্শক, সাতজন সাধারণ সদস্য ও বাকিরা কনস্টেবল। ছয়জন নারীও আছেন এই তালিকায়। তাঁদের ৯৮ জন আছেন রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে, বাকিরা করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। ঢাকা মহানগরীতে প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল ১১ এপ্রিল। এরপর ১২ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১১৭ জন। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে পুলিশ সদস্য ঢাকায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের যে সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই বাইরে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের যাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের দ্রুত আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ডেমরার অস্থায়ী পুলিশ লাইনসে ১০০টি বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজারবাগ মেহমানখানা এবং মিরপুর মেহমানখানায়ও কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, দেশে দুই লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য সরাসরি মাঠে থেকে করোনার বিস্তার রোধে কাজ করছেন। তাঁদের যথাসম্ভব সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো অনেক চাহিদা রয়েছে। তারপরও কাজ করতে গিয়ে পুলিশের সদস্যদের সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনেশুনেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। প্রতিটি কাজেই তাঁদের মানুষের খুব কাছে যেতে হচ্ছে। সে কারণে তাঁরা সংক্রমিত হচ্ছেন। তবে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।