প্রদীপ কুমার দেবনাথ, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ‘বাড়িতে কেউ আছেন? দরজা খোলে ব্যাগটা ধরুন। এখানে আপনাদের জন্য চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন সহ অন্যান্য দ্রব্য আছে।’ এভাবেই অসহায়দের দ্বারে দ্বারে ঘুরে করোনা ভাইরাসের কারণে লক ডাউনে থাকা গৃহবন্দী মানুষের ঘরে ব্যাগ ভর্তি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘Aid for Nasirnagar ‘ এর যুবারা।
লক ডাউনের শুরু থেকে অদ্যাবধি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত তহবিল হতে নাসিরনগরের বিভিন্ন এলাকায় দুস্থদের বিরতিহীন সাহায্য করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি।
এই সংগঠনের উদ্যোক্তা নাসিরনগর উপজেলার ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী শরীফুজ্জামান চৌধুরী সুমন ও ছাত্রলীগের সাবেক বিপ্লবী নেতা সুজন দেবের নেতৃত্বে একদল উদ্যমী যুবকের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংগঠনটি প্রকৃত অসহায় মানুষদের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
এমনও দেখা গেছে যে, এর সদস্যরা মাথায় করে ত্রাণের বস্তা দুর্গম এলাকায়, অন্ধকার রাস্তায় কাঁদা মাড়িয়ে পৌঁছে দিচ্ছে দুস্থদের বাড়িতে। প্রচার বিমুখ এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির অব্যাহত দান কর্মহীন অভাবগ্রস্থ নিরীহ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মনিটরিং অব্যাহত রাখছেন উদ্যোক্তাগণ।
কথা হয় সংগঠনটির মূল উদ্যোক্তা শরীফুজ্জামান চৌধুরী সুমনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে সাধ্যমত চেষ্টা করছি এই মুহুর্তে কর্মহীন অভাবগ্রস্থ মানুষদের কল্যাণে। আমাদের এ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা ভাবছি রমযানে এ ত্রাণ সহায়তা আরও বাড়ানো যায় কিনা।
অন্যতম উদ্যোক্তা সুজন দেবের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, সদস্যবৃন্দ যতটুকু সম্ভব অবদান রাখছে আর্থিক ও শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে। আমাদের এ শ্রম যদি এ দুর্যোগকালীন সময়ে অসহায় মানুষের সামান্য কল্যাণে ব্যয় হয় আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। আমরা কোন অভাবগ্রস্থ দুস্থ বা অসহায় ব্যক্তির সন্ধান পেলে নিজ উদ্যোগে সাহায্য করি।
অন্যতম সদস্য রুবেল মল্লিক বলেন, সমাজের একদম নিম্নশ্রেণীর প্রান্তিক মানুষগুলো সরকারি বেসরকারি সব ধরনের ত্রাণ পায়। কিন্তু এই লক ডাউন সময়ে মধ্যবিত্ত এমন অনেক পরিবার আছে যারা ব্যবসা – বানিজ্য বন্ধ থাকায় মহা বিপাকে আছেন। আমরা তাদের খুঁজে বের করে তাদের কষ্ট শেয়ারের চেষ্টা করছি।
পথিক দত্ত বলেন, গতকালই একজন গণমাধ্যমকর্মীর স্টেটাস থেকে একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অসহায় মানুষের খোঁজ পেয়ে সুমন ভাই ও সুজনদা উনার বাড়িতে গিয়ে আমাদের উপহার পৌঁছে দিয়ে এসেছেন।
বাংলাদেশে এমন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিরল। কারণ, এ সংগঠনটি কারও দানের আশায় হাত পেতে বসে থাকেনা। আবার ত্রাণ মাথায় নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে বিলিয়ে দিতে যায় না। যদিও মাঝে মাঝে এমন দেখা যায় – এটা নিছক প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কিন্তু, এ সংগঠনটি বরাবরই প্রচার বিমুখ।