খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর জোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাযায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জমায়েতকে কেন্দ্র করে একটি ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফোনালাপে শুনা যায়, একটি দলের আমির কিভাবে লোক সমাগম করতে হবে তার দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ফোনালাপটি পুরোপুরি শুনলে বোঝা যায় এই জানাজার নামাজের জমায়েত যতটা না মুখ্য ছিল ধর্ম-কর্ম পালনের তার চেয়ে বেশী ছিল কিভাবে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে লকডাউন ভেঙ্গে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা যায় তার চেষ্টা। নির্দেশনায় আরোও জানানো হয় প্রশাসন কোনো রকম হস্তক্ষেপ করলে তাঁর দলের কর্মীরা সেটা সামাল দেবে এবং প্রয়োজন হলে আরেকটা শাপলা চত্বর বানানো হবে। নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ঐ দলের আরও কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও আশ্বস্ত করা হয়। সরকারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয় তাতে।
কিছুদিন যাবত কয়েকজন তথাকথিত ইসলামী বক্তা ও ওয়াজি কর্তৃক জামায়ত নেতা যুদ্ধ অপরাধের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ জমায়েত এবং আইন মন্ত্রীর মায়ের জানাজার বানোয়াট ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোপাগান্ডা চালানো এই সবই যে একই সূত্রে গাঁথা তাতে কোন সন্দেহ নেই। যুগে যুগে এদলটি রাজনীতি করছে ধর্মকে পুঁজি করে।ইসলামের দোহাই দিয়ে এরা এদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করছে। ৭১ সালে নারী নির্যাতন,খুন,লুণ্ঠন ও ধর্ষণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল এ দলের নেতা-কর্মীরা। এদেশের স্বাধীনতা তারা কখনো চাইনি, মেনেও নিতে পারেনি এবং এখনো দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।কথায় আছে কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
৭১ এর পরাজয়ের পর এ পরাজিত শক্তি সাময়িক গা ঢাকা দিলেও ষড়যন্ত্র কখনো থামায়নি। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মেজর জিয়ার হাত ধরে তারা এদেশে স্থায়ী ভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করে পুরনো স্টাইলে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করেছে। এমনকি ২০০১ সালে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে।
২০০৬ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে দলটি আবারো কোনঠাসা হয়ে পড়ে এবং তাদের দলের সিনিয়র নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয় অনেকের ফাঁসি হয়। এ প্রজন্মের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। তারা আবারো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। যতবারই এ দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ষড়যন্ত্র করে রাজনীতিতে ফিরেছে এবং বিএনপি’র আনকূল্য পেয়েছে। এবারও যে তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে ফিরতে চাইবে ও চাচ্ছে এবং বিএনপিকে তাদের সহযোগী হিসেবে পাবে তা নিশ্চিত।
দেশের এ মহামারীর সময়, সংকটময় মুহূর্তে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিপদে ঠেলে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এরা পিছপা হবে না। প্রয়োজনে সব মানুষ মরে গেলেও না। সরকার ও দেশ প্রেমিক জনগনকে এ বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। সরকারকে একদিকে করোনা মহামারী মোকাবেলা করতে হবে এবং ত্রান বিতরন ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, অন্যদিকে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাথে সাথে বিএনপি’র অবস্থান সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে যেমন মেজর জিয়া পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে ও খুনিদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে এবং এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি ছিল তেমনিভাবে তাঁর দল বি এন পি ও এই নব্য ষড়যন্ত্রকারিদের পিছন থেকে শক্তি ও মদদ যোগাবে এবং আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবে। তাই সাধু সাবধান ধর্মকে ব্যবহার করে নোংরা খেলা আর খেলতে দেয়া যায় না।
এম হাবিবুর রহমান
চীফ এঢিটর