করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিউইয়র্কে দুইজন বাংলাদেশি চিকিৎসক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ডা. মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন গেল ৬ এপ্রিল সোমবার সকালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম বাংলাদেশি ডাক্তার হিসাবে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নিউইয়র্কের একজন নামকরা এপিডেমিওলজিস্ট ছিলেন। সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে মুক্তিযোদ্ধা ডা. ইফতেখার উদ্দিন এমবিবিএস পাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে প্রায় ৭/৮ দিন যাবৎ করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে ৮ এপ্রিল মধ্যরাতের লং আইল্যান্ডের মানহাসেটের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন ডা. রেজা চৌধুরী। তিনি পার্কচেষ্টারে ‘ওয়েস্ট চেস্টার মেডিক্যাল হেলথ কেয়ার’ এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন।প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার কোনও রোগী থেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন।
নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এরমধ্যে নিউইয়র্ক স্টেটের অর্ধেক অর্থাৎ ৫ লাখ এবং এই ৫ লাখের মধ্যে সিটির বাসিন্দা অন্তত ৩ লাখ। এই ৩ লাখ বাংলাদেশি নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যার (৮৬ লাখের মধ্যে) ৩.৪৯ শতাংশ। সেই হিসেবে নিউইয়র্কে অন্তত ৩ হাজার বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যাটা এর চেয়েও বেশি হতে পারে।হোয়াইট হাউজ বলছে, আফ্রিকান আমেরিকানরা বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এরপরই আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখছি, এশিয়ানদের মধ্যে বাংলাদেশি ও নেপালি কমিউনিটিতে তুলনামূলক আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে যে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স ও কিংস (ব্রুকলিন)– সেখানে বেশি বাংলাদেশি বাস করেন এবং করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সেখানেই সবচেয়ে বেশি।এখন আসা যাক বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যাটা কত? নিউইয়র্ক সিটিতে করোনায় মোট আক্রান্ত ৮৬ হাজারের মধ্যে ৪৮০০ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ মৃতের সংখ্যা আক্রান্তের ৫.৫৯ শতাংশ। এখন সেই হার হিসেবে বিবেচনা করলে দেখা যায়, আক্রান্ত ৩ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ১৬৭ জন মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা জেনেছি মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের।কেন কম জেনেছি, সেই ব্যাখ্যাও আছে, হতে পারে– এক. কোভিড-১৯ ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় এতে আক্রান্ত হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে সামাজিক কারণে অনেকে তা বলতে দ্বিধা করছেন। দুই. ওয়ার্ল্ডওমিটার বলছে, প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে যতজন মারা যাচ্ছেন প্রকৃত সংখ্যাটা আরও ১৮০ থেকে ১৯৫ জন বেশি হবে। কারণ করোনা লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়া অনেকের ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ হয়নি। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু হওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। যে হিসাবটা মোট সংখ্যার সাথে সাধারণত যোগ হচ্ছে না।