আজ পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত। রাতভর নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজগার ও মহান আল্লাহার কাছে সারা বছরের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা পবিত্র শবে বরাত পালন করে থাকে।
হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিবাগত রাতটিকে মুসলমানগণ সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। ধর্ম অনুযায়ী মহান আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।
পাশাপাশি আল্লাহর কৃপা লাভের আশায় অনেকে গরিব, এতিম, মিসকিনদের টাকা পয়সা দান করে থাকেন। এছাড়া মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। না না ধরনের হালুয়া রুটি তৈরি করে আত্মীয় স্বজনসহ অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে থাকে মুসলমানেরা।
তবে এবারের শবে বরাত সেই আনুষ্ঠানিকতা না করেই পালন করতে হচ্ছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে এরই মধ্যে মসজিদে জামাতসহ সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাসায় থেকেই শবে বরাত পালন করতে বলা হয়েছে।
এ কারণে দিনটি উপলক্ষে দেখা যায়নি রুটি হালুয়া নিয়ে ঘরে ঘরে কোনো ব্যস্ততাও। মসজিদগুলোতেও নেই বাড়তি কোনো আয়োজন।
শবে বরাতে ঘরে বসে নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিয়ে রাজধানীর শাহজাদপুর ঈদগাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন লিখেছেন, শাবান মাসের মধ্য রজনী (শবে বরাত) একটি বরকতপূর্ণ রজনী। বিশুদ্ধ হাদিসের দ্বারা এ রাতের ফজিলত প্রমাণিত।
প্রিয় নবী হযরাতম মুহাম্মদ (স.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের যুগে এ রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে কোনো আমল করা, বিশেষ ধরণের কোনো অনুষ্ঠানাদী করা, আলোক সজ্জা করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা ইত্যাদীর কোনো ছহিহ প্রমাণ পাওয়া যায় না।
বুজুর্গানে দ্বীন ও আল্লাহর অলি-আউলিয়াগণ এ রাত অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যক্তিগত ইবাদত বন্দেগী, যিকির-আযকার, তাওবা-ইসতিগফার ইত্যাদীর মাধ্যমে কাটিয়েছেন। আর তারাবীর নামাজ ব্যতিত সুন্নাত-নফল নামাজ মসজিদের চেয়ে বাসায় একাকী আদায় করলেই বেশি ছাওয়াব হয়।
গতকাল বুধবার ইফার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে মহিমান্বিত এ রজনীতে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগির সময় ব্যক্তিগত দোয়া ও প্রার্থনা ছাড়াও করোনাভাইরাসের মহামারির আক্রমণ থেকে দেশবাসী, প্রিয় মাতৃভূমি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখতে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করার জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ।
দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, শিক্ষকসহ সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘মহিমান্বিত রজনী হিসেবে মুসলিম সমাজে শবে বরাতের গুরুত্ব অনেক। এ রাতে মানুষ ইবাদত বন্দেগীতে সময় পার করেন এবং দিনে রোজা রাখেন। আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে, কান্নাকাটি করে শবে বরাত পালন করেন।’
‘কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষতি থেকে বাঁচতে বর্তমানে অনেক জেলা-উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে সীমিত উপস্থিতির পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শীর্ষ আলেম সমাজ। এই পরিস্থিতিতে একাকিভাবে শবে বরাতের যাবতীয় আমল ঘরে করা উচিত। আর সুন্নাহর তাকাজাও এটাই।’
এছাড়া পবিত্র শবে বরাতের রাতে মসজিদে না গিয়ে নিজ নিজ ঘরে একাকি ইবাদত করার জন্য দেশবাসী প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী।
বুধবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।