মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ। তার আসল নাম ছিল রমা দাশগুপ্তা। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যিনি সুচিত্রা সেন নামেই পরিচিত।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনার তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহুকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানীর বাড়িতে তার জন্ম হয়। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ও মা ইন্দিরা দেবী। বাবা ছিলেন পাবনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। পাবনার ওই বাড়িতেই শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে এই নায়িকার। তিনি পড়তেন পাবনা টাউন গার্লস স্কুলে। দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি পরিবারের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান।
দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ের সুবাদে রমা দাশগুপ্তা হয়ে যান রমা সেন। তখন তারা থাকতেন বালিগঞ্জে। রমার শ্বশুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ভাই বিমল রায়। তিনিই প্রথম রমাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শ্বশুর আদিণাথ সেনের অনমুতি ছাড়া অভিনয়ে আসা সম্ভব ছিল না। রমা নিজ থেকেই একদিন শ্বশুরকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। শ্বশুরও মত দিলেন। আর বাংলা সিনেমা আজীবনের জন্য ঋণী হয়ে থাকলো অদিণাথ সেনের কাছে। শ্বশুরের মত পেয়ে রমা যাত্রা শুরু করেন স্টুডিও পাড়ায়। সিনেমায় এসে রমা সেন হয়ে গেলেন সুচিত্রা সেন।
‘সাত নম্বর কয়েদি’ সিনেমার পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতিশ রায় রমার নাম দেন সুচিত্রা। ১৯৫৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাত নম্বর কয়েদি’ তার প্রথম সিনেমা। তবে সুচিত্রা সেন প্রথম অভিনয় করেন ১৯৫২ সালে বীরেশ্বর বসুর ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে সিনেমাটি তখন মুক্তি পায়নি। এর প্রায় ২২ বছর পর ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’ নামে সিনেমাটি মুক্তি পায়। ততদিনে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে কিংবদন্তির আসনে।
‘সাত নম্বর কয়েদি’র পর ওই বছরই তিনি আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। সে বছরই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমার মধ্য দিয়েই জন্ম হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা জুটির।
বাংলা চলচ্চিত্রের রোমান্টিক মেলোড্রামার আইকনে পরিণত হওয়া এখন পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় এ জুটি বাংলা সিনেমাকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। উত্তম-সুচিত্রার একগাদা হিট সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘ওরা থাকে ওধারে’, ‘মরনের পরে’, ‘গৃহ প্রবেশ’, ‘শাপমোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘সবার উপরে’, ‘সপ্তপদী’, ‘সাগরিকা’, ‘সাথীহারা’, ‘আলো আমার আলো’, ‘হার মানা হার’, ‘ইন্দ্রানী’ প্রভৃতি।