আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এ দাবি জানানো হয়।
এদিন বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাকক্ষে কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। এসময় কমিশনের কাছে মহাসচিব ফখরুলের চিঠি পৌঁছে দেন প্রতিনিধি দল।বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।চিঠিতে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ৮ এর উপনির্বাচনের বিস্তারিত তথ্যসহ চিত্র দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যা আপনারাও অবগত আছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত এই চিত্র ইভিএম, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার সম্পর্কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক দাবিকে আরো পাকাপোক্ত করেছে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি ইভিএম সম্পর্কে আমাদের দলের বক্তব্য এবং দাবি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিকে অবগত করেছি। ৬ জানুয়ারি আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আমাদের দলের দুই মেয়র প্রার্থীসহ বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মহানগরের আগামী ০১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি দাবিনামা আপনাদেরকে (নির্বাচন কমিশন) পেশ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে এই চিঠি আবারও আপনাদের কাছে পেশ করছি। একটি স্বচ্ছ ও শুদ্ধ নির্বাচন ব্যবস্থা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থহীন। গণতন্ত্র কার্যকরী করার জন্যই ঐ ভোট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমাদের সংবিধান নির্বাচন কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান জন্ম দিয়েছে।‘ইভিএম প্রকল্পের মতো একটি সর্বজন বিতর্কিত উদ্যোগ সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে। ইতোমধ্যেই ইভিএম’র যান্ত্রিক অকার্যকারিতা যেমন প্রমাণিত হয়েছে তেমনি নির্বাচন কমিশনকে সহযোগী অথবা নিষ্ক্রিয় রেখে কাগজের ব্যালট ছিনতাই বা ডাকাতির মতোই ইভিএম’র উপরেও সরকারদলীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং ও ভোটারদের দেদারছে সরকারদলীয় বাহিনীরা দখল করেছে। অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন যার সর্বশেষ প্রমাণ। নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান ইতোমধ্যেই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট ব্যবস্থায় পুনরায় একটি অবাধ নির্বাচন আয়োজনের জন্য আপনার বরাবর দাবি করেছেন।’‘আগামী ০১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের হাতে এখনও সুযোগ আছে নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করা। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই উন্মোচিত ইভিএম’র অকার্যকারিতাকে বিবেচনায় নিয়ে ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট ব্যবস্থাতেই ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। ভোট প্রক্রিয়ায় সরকারি দলের খবরদারি বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আশা করি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা প্রমাণে আমাদের উল্লেখিত দাবি পূরণ করে ০১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ করার ব্যবস্থা নিবেন।’সূত্র : আর টি ভি