গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল বুধবার। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করবেন। গত ১৭ নভেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়। কারাগারে থাকা আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় ওই দিন।
এই মামলায় ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৬ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলা মামলার বিচার শুরু হয়।গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল গত বছরের ২৩ জুলাই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩)-এর ৬(২)/৭/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায়। এসব ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।অভিযুক্ত আট আসামি হলেন- গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, নওগাঁর আসলাম হোসেন ওরফে আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, কুষ্টিয়ার আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, জয়পুরহাটের হাদীসুর রহমান ওরফে সাগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, বগুড়ার মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও রাজশাহীর শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ। অভিযুক্ত সবাই নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।আটজনকে অভিযুক্ত করা হলেও হলি আর্টিজানের ঘটনার সঙ্গে ২১ জঙ্গির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিল সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে। হলি আর্টিজানে জিম্মি সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করতে ওই অভিযান চালানো হয়েছিল। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। ওই পাঁচজনই সরাসরি হলি আর্টিজানে ঢুকে সেখানে থাকা দেশি-বিদেশি লোকজনকে জিম্মি করেন এবং বেশ কয়েকজন জিম্মিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন। এ ছাড়া জেএমবির প্রধান সমন্বয়কারী তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান, সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম, রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তানভীর ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজানও হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে আসে। এই আটজন বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টায় হলি আর্টিজান বেকারিতে অতর্কিতে আক্রমণ করেছিল পাঁচ জঙ্গি। তারা ভেতরে থাকা সবাইকে জিম্মি করে। একে একে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল। সেখানে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আহত হন র্যাব-১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ, পুলিশের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।