জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।এসময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে জড়ো হন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেট থেকে আসা নেতাকর্মীরা দুপুরের পর থেকে সেখানে ভিড় করতে থাকেন। তখন তারা দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। নানা রকমের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আসা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে বিমানবন্দর এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এবার প্রিয় নেত্রীকে আমরা স্বাগত জানালাম। নেত্রী যতদিন থাকবেন, এভাবেই আমরা তার পাশে পাশে থাকবো’।এদিকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে দেশে গণতন্ত্রহীনতাসহ নানান অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানায়। এসময় তারা শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে লেখা বিভিন্ন ব্যানারও বহন করে। তবে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী ম্যানহাটনে হোটেল লোটে প্যালেসে যান। যুক্তরাষ্ট্রে আটদিনের সরকারি সফরে এবার তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।এছাড়া ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে জাতিসংঘ ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলে (ইসিওএসওসি) ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বহুপাক্ষিক প্যানেল বৈঠক পরিচালনা করবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ হলে ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে বক্তব্য রাখবেন এবং ‘রিকগনাইজিং পলিটিক্যাল লিডারশিপ ফর ইম্যুনাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় আয়োজিত মিয়ানামারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের অবস্থার ওপর একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এবারের অধিবেশনেও রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও টেকসই সমাধানে প্রধানমন্ত্রী তার জোড়ালো অবস্থান তুলে ধরবেন। শেখ হাসিনা ‘লিডারশিপ ম্যাটার্স-রিলেভ্যান্স অব মহাত্মা গান্ধী ইন দ্য কন্টেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এছাড়া তিনি লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি সম্মেলন) উপর উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী কো-মডারেটরের দায়িত্ব পালন করবেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের সফরেও ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন। এছাড়া তিনি ইউনিসেফ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘সাইটেইনেবেল ইউনিভার্সেল হেল্থ কভারেজ: কমপ্রেভেনসিভ প্রাইমারি কেয়ার ইনক্লুসিভ অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিজেবিলিটিজ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী একই দিন জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনের ৭৪তম বার্ষিক সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য রাখবেন।২৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। একইদিন তিনি নিউইয়র্কের হোটেল ম্যারিয়ট মারকুইসে বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।ভ্যাকসিনেশন ও যুব দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার সময় দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ইউনিসেফ ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ শীর্ষক পুরস্কারে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানিত করবে। প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকা, ওয়াশিংটন পোস্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেবেন।সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। আবুধাবি হয়ে আগামী ১ অক্টোবর ভোরে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।