প্রদীপ কুমার দেবনাথ।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ভারতের আগে অবস্থান বেশ কিছু সূচকে। ব্যাংকে রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ। প্রত্যেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ পরিচালনায় এদেশের জিডিপি এখন বিশ্বের ১৩ তম অবস্থানে। যোগাযোগ, বিজ্ঞানও প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ প্রত্যেকটি খাতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার অনেক উন্নয়ন, শিক্ষকদের আর্থিক নিশ্চয়তা সহ বহুবিধ উন্নতি সাধিত হয়েছে, হচ্ছে।
অপরদিকে ঠিক বিপরীত চিত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায়। এ খাতে অবহেলার বিষয়টি সুস্পষ্ট। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংকট, শাখা অনুমোদনের পর শাখার বিপরীতে শিক্ষকের অভাব, শিক্ষক নিয়োগ হলেও বছরের পর বছর এম.পি.ও হীন থাকা, অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমপিও নিশ্চিত না করা, অবকাঠামো ও ভবন স্বল্পতা, এক বিষয়ের জন্য অন্য বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যপুস্তকের মান শ্রেণি উপযোগী না হওয়া, কর্মচারী স্বল্পতা, অশিক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা বিদ্যালয় পরিচালনা, ম্যানেজিং কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা, প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি নির্ভর হওয়া, শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং যোগ্যতা ও সময়োপযোগী বেতন নিশ্চিত না করায় মন্ত্রণালয়ের স্থবিরতা ও অবহেলার চিত্র আজ সুস্পষ্ট।
বর্তমান বেতন ও ভাতা নিয়ে একজন শিক্ষকের সম্মানজনকভাবে চলা বড়ই দুরূহ।
একজন শিক্ষকের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সম্পর্কে কর্তা ব্যক্তিরা কখনওই আন্তরিক নন। আন্তরিক থাকলে অবশ্যই পেশাটির সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও শিক্ষকদের ব্যাপারে ভাবতেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও আমলারা। আমার বিশ্বাস সকলেই শতভাগ অবগত আছেন বর্তমান শিক্ষকদের অবস্থা সম্পর্কে।
মন্ত্রণালয়ের সকলেই বুঝেন যে বেতন প্রতিমাসে অনুদান হিসেবে বেসরকারি শিক্ষকদের দিচ্ছেন তাতে সারাবছর আর্থিক দৈন্যতা মাথায় নিয়েই রোগাক্রান্ত, পুষ্টিহীন ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট নিরীহ শিক্ষক প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন আর প্রচন্ড মনোবেদনা নিয়ে কর্তব্যের অংশ হিসেবে রুটিনমাফিক শ্রেণীকার্যক্রম চালাচ্ছেন যা কোনভাবেই সন্তুষ্ট জনক শিক্ষা প্রদানে সহায়ক নয়।
এ অবস্থা উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক – কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ।
শিক্ষক সমাজ বিশ্বাস করেন জাতর জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মাদার অব হিউমিনিটি খ্যাত, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই শিক্ষা বান্ধব। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের দুজন অভিভাবক, দুজন মাননীয় মন্ত্রীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে এবং এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বুঝালে উনিও বুঝবেন জাতীয়করণে বেসরকারি শিক্ষা উপকৃতই হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলা সহজতর হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এও বুঝবেন আর্থিক সচ্ছলতা আসলে শিক্ষকদের পারিবারিক, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা হ্রাস পেলে শতভাগ কার্যকর শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
জাতীয়করণের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তার সংস্থান বিদ্যালয়ের ফান্ডগুলো সরকারি খাতে নিলেই হয়ে যাবে। জাতীয়করণের জন্য অতিরিক্ত কোন অর্থই ঋণ বা অন্যখাত থেকে আনতে হবেনা।
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল বজায় রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। জাতীয়করণ হলেই বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল সূচকেই আমরা এখন বিশ্বের রোল মডেল। তবে কেন শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকবো? অবশ্যই এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব শীঘ্রই গুরুত্বসহকারে নিবেন এবং জাতীয়করণের ঘোষণা দিবেন বলে বেসরকারি শিক্ষক – কর্মচারীগণ বিশ্বাস করেন।
প্রদীপ কুমার দেবনাথ,
শিক্ষক, লেখক ও সাংবাদিক।