ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে চিরহরিৎ বন আমাজন। গেল কয়েকদিনে বনাঞ্চলটির একটি বিশাল অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদির সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো।
এদিকে আমাজনে বারবার আগুনের লাগার ঘটনাকে বৈশ্বিক সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও।
আমাজন বন সবুজে ঘেরা আর পাখিদের কল কাকলিতে মুখরিত চিরহরিৎ এ জঙ্গলটি। বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি আমাজনে। সে কারণে পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে অনেক আগেই। গহীন এ জঙ্গলে নানা ধরনের বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণির অস্তিত্ব রয়েছে। রয়েছে আদাবাসিদের বসবাস।
কিন্তু কয়েকবছর ধরে বারবার অগ্নিকাণ্ডে হুমকির মুখে পড়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম এ বনভূমি। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটছে সেখানে বসবাসরত আদিবাসীদের।
তারা বলেন, এখনকার আদিবাসী সম্প্রদায় খুবই খারাপ সময় পার করছেন। জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে আমাদের থাকা এবং খাবারের জোগান খুবই কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমজনে আগুন লাগা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, কিন্তু এবারের মতো আগুন আগে কখনও ছড়ায়নি। অগ্নিকাণ্ডের জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দুষছেন বেসরকারি এনজিওগুলোকে। যদিও এনজিওরা দায়ী করছে ব্রাজিল সরকারের উন্নয়ন নীতিকে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন দেশটির পরিবেশ মন্ত্রী রিকার্ডো সালেস। জলবায়ু বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠলে তোপের মুখে পড়েন তিনি।
এদিকে আমাজনে বারবার আগুন লাগার ঘটনাকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে, এর জন্য পুরো বিশ্ব হুমকিতে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, আসন্ন জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে আমাজনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তোলা উচিত। তবে, ম্যাক্রোঁর টুইটের প্রতিক্রিয়ায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো অভিযোগে করেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্যই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমন কথা বলছেন। আগুন নেভানোর মতো ব্রাজিলের সরকারের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদির সংকট রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে, তার সরকার আগুন নেভাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও টুইটারে। বনাঞ্চল যখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, তখন বিশ্ব নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। সেই সঙ্গে আমাজন জঙ্গল সুরক্ষায় ব্রাজিল সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে অব্যাহত দাবানলের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘও।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, আমাজনে অব্যাহত দাবানলের বিষয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। একটু ভেবে দেখুন এভাবে বন পুড়তে থাকলে বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, নয়তো এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবছর আমাজন বন প্রায় দুইশো মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত এ গহীন অরণ্যে গত বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বিশ্বের বৃহৎ এই বনভূমি রক্ষায় বিশ্ব নেতাদের পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ সব মহলের।