সাতক্ষীরার কয়েকটি পশুর হাট ও খামারে ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতাদের কেউ কেউ ঈদের পূর্ব মূহুর্তে পশুর মূল্যহ্রাসের আশঙ্কায় আগেভাগেই তার কোরবানির পশুটি বিক্রি করতে চাচ্ছেন। আবার অনেকে ঈদের আগ মূহুর্তে কোরবানি পশু বিক্রি করতে আগ্রহী, তদের ধারণা তখন কোরবানি পশুর মূল্য সঠিক পাওয়া যাবে। একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝেও।
অন্যদিকে সরকারও এবার ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থের প্রতি নজর রাখছে। গত ১৬ জুলাই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় আসন্ন ঈদুর আজহা পর্যন্ত সীমান্ত পথে সকল বৈধ-অবৈধ ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এবার সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশের সম্ভাবন কম।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য এ বছর সারা দেশে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু মজুদ আছে। এরমধ্যে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু ও মহিষ,৭২ লাখ ছাগল ও ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশুর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
সাতক্ষীরাতে আগামী ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর চাহিদা ৫২ হাজার। জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের হিসেবে এ বছর সাতক্ষীরাতে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ৫৬ হাজার ২৭৬টি। এরমধ্যে গরু ৩০ হাজার ৫৭৩টি এর মধ্যে ষাড় ২০ হাজার ৫৮৭টি, বলদ ৩ হাজার ৯৭৮টি, গাভী ৫ হাজার ৯৭৮টি। অনান্য পশুর মধ্যে মহিষ আছে ৪টি এবং ছাগল ও ভেড়া আছে মোট ২৫ হাজার ৭০৩টি এরমধ্যে ছাগল ২২ হাজার ৪৮০টি এবং ভেড়া ৩ হাজার ২২৩টি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর চাহিদার সাথে সংগতি রেখে আমাদের যথেষ্ট কোরবানির পশু আছে। সরকারের ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্তে খামারিরা খুশি হয়েছে। এতে তারা আগামীতে আরও বেশি করে পশু পালনে উৎসাহিত হবে। দেশিয় পদ্বতিতে সুষম খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করন ও পশুর সুস্থতা নিশ্চীতে কাজ করছে জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফরের কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরা বৈকারী কালিয়নী খাটাল পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে আগামী কোরবানি ঈদ পর্যন্ত গরু আমদানি বন্ধ রাখতে। আমাদের ধারণা খামারীদের আবেদনের ফলে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে ক্রেতাদের বেশিদামে কোরবানির গরু কিনতে হতে পারে।
শহরের ইটাগাছা এলাকার খামারি রুহুল আমিন জানান, আশা করছি বাজার ভাল থাকায় গতবারের তুলনায় এবার কোরবানির গরুর মূল্য বেশি পাব। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকা সে হিসাবে কোরবানির গরুর প্রতি কেজি ৬০০টাকা মূল্যে দাম পাব আশা করছি।
সাতক্ষীরা খড়িবিলার খালিদ ডেইরী ফার্মের মালিক মনিরুল ইসলাম জানান, ইন্ডিয়ান গরু বন্ধ করা সরকারের একটি সঠিক সিদ্ধান্ত, এর ফলে খামারিরা কোরবানির পশুর সঠিক মূল্য পাবে। মানুষ পশুর খামারে উৎসাহিত হবে কমবে বেকারত্ব।
বাঁকাল দৌলতপুর গ্রামের খামারি আকাশ ঢালি জানান, আমি ছয় মাস পূর্বে ১ লাখ টাকা দিয়ে একটি অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান বাছুর কিনি। খুদের ভাত, ভূষি, খোল, নেপিয়ার ঘাস ও অন্যান্য খাবার খরচ এবং বিদুৎ বিলসহ আমার প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয় । গরুটি এবার কোরবানি ঈদে ২ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রির আশা আছে।
কোরবানি গরুর ক্রেতা সুলতানপুর কাজীপাড়ার নাজমূল হক পল্লব জানান, গত বছরও ইন্ডিয়ান গরু বন্ধ ছিল, সাতক্ষীরাতে এর চাহিদা কম। ইন্ডিয়ান গরুর চাহিদা মূলত কুমিল্লা চিটাগাং পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলে। তবে এবার দেখছি বর্তমানে সাতক্ষীরাতে কোরবানির গরুর দাম বেশি, এবার ঈদে গতবারের তুলনায় বেশি দামে কোরবানির গরু কিনতে হবে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফিরোজ হাসান জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে পৌরসভার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবারের ন্যায় এবারও কারিমা স্কুলে কোরবানির পশুহাট বসতে পারে তবে তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।