খুন করে তা ‘গুজব’ বলে চালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা মাথায় এঁটে রাজশাহী এসে ধরা পড়েছে এলিট সিকিউরিটির ৪ কর্মী। শনিবার গভীর রাতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ফুলতলা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। হত্যার পর গলাকাটা গুজব বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা।
শনিবার (২৭ জুলাই) দিনগত রাতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ফুলতলা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। হত্যার পর ‘গলাকাটার গুজব’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা।আটকরা হলেন- বাগেরহাটের মোল্লারহাট থানার গোড়ফা এলাকার রবিউল শেখের ছেলে রাসেল শেখ (২৪) ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন এলাকার হাসেম আলীর ছেলে সজীব (১৯), ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জের মোশারফ হোসেনের ছেলে মিরাজ হোসেন (১৯) ও পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার নলুয়াবাগি মুজিব মৃধার ছেলে কাওসার মৃধা (২০)। এরা সবাই এলিট সিকিউরিটি ফোর্স কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মী বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
রোববার (২৮ জুলাই) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহ্। তিনি বলেন, সৌদি আরবের একটি বিউটি পার্লারে চাকরি করেন মোল্লাহাট এলাকার কাঞ্চু শিকদার ওরফে কাঞ্চনের স্ত্রী তানিয়া। সেখানে গিয়ে মোবাইলে একই এলাকার রাসেলের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
তানিয়ার করা পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্বামী কাঞ্চনকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাসেল ওই নিরাপত্তাকর্মী তিন বন্ধুকে নিয়ে বাগেরহাট থেকে রাজশাহীতে আসেন। খরচের জন্য তানিয়া রাসেলকে ২০ হাজার টাকাও দেন।
পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ জানান, বর্তমানের ছেলেধরা বা গলাকাটার গুজবের সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন রাসেল। কাঞ্চনকে হত্যার পর গলাকাটা বলে প্রচারের চেষ্টা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবাসী তানিয়ার স্বামী কাঞ্চনকে হত্যার জন্য তিনি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ফুলতলা এলাকার একটি আম বাগানকে বেছে নেন। পরে ওই বাগানের ছবি তুলে ইমোতে তানিয়ার কাছে পাঠানো হয়। বাগানটি নিরাপদ হওয়ায় সেখানে স্বামীকে নিয়ে হত্যার জন্য রাসেলকে নির্দেশ দেন তানিয়া। পরিকল্পনা মতো, পাসপোর্ট করানোর নাম করে তানিয়ার স্বামী কাঞ্চনকে রাসেল ও তার তিন বন্ধু মিলে ট্রেনে করে রাজশাহী নিয়ে আসেন।
এরপর মিরাজ ও কাওসার কাঞ্চনকে নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চারঘাট উপজেলার সেই আমবাগানের উদ্দেশ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে রওয়ানা হন। তবে ফুলতলা বাজার এলাকায় পৌঁছার পর কাঞ্চনের মনে সন্দেহ হয়।
তিনি তাৎক্ষণিকভাবে চিৎকার শুরু করেন এবং দৌড়াতে থাকেন। এসময় বাজারের লোকজন মিরাজ ও কাওসারকে আটক করে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের সোপর্দ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাসেল ও সজীবকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র ও চেতনানাশক ওষুধ জব্দ করেছে। পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাসেল তার বন্ধুরা মূল পরিকল্পনার কথা ফাঁস করেন। তাদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই নিজ এলাকা বাগেরহাটের গোড়ফায় চলে গেছেন কাঞ্চন।
রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ্ বলেন, কাঞ্চনকে হত্যার জন্য তানিয়ার সঙ্গে রাসেলের ফোনালাপ, এসএমএস ও ইমোতে কথোপকথনের অডিও মিলেছে। এ ঘটনায় চারঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করবেন।
মামলা হলে এতে গ্রেফতার দেখিয়ে আটকদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে বলেও জানান রাজশাহী পুলিশ সুপার।