মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যায় জেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মনু ও ধলাই নদীর ভেঙে যাওয়া দুটি স্থানের বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মনু ও ধলাই নদীর পাড়ের বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুদিনে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ উঁচু স্থানের পানি সরে গেছে। এতে অনেকের বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বাড়িঘরে ফিরছেন। অনেকে আবার বন্যায় ধসে পড়া ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ করছেন। সেই সঙ্গে ঘরের ভেতর আটকে থাকা কাদা-পানি সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাইজপাড়া এলাকার দিনমজুর রিপন জানান, তৃতীয় দফা বন্যায় তাদের এলাকায় ৮ থেকে ৯ ফুট পানি উঠেছে। ঘরের চালের সঙ্গে নদীর পানি ছিল। গত দুদিনে এসব পানি সরে গেছে। এখন তারা বাড়িঘরে ফিরছেন। রাজনগরের টেংরা ইউনিয়নের রাফি জানান, এ রকম বন্যা আমার জন্মের পর দেখিনি। একসঙ্গে এত পানির ঢল নেমে ঘর অর্ধেক ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানালেন, দফায় দফায় বন্যায় তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কারো ঘরের দরজা ভেঙে গেছে। আবার কারো ঘর ধসে গেছে। একই অবস্থা জেলার প্রতিটি বন্যাদুর্গত এলাকায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টিপাত কমে আসায় মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুততার সঙ্গে নামছে। এতে বন্যার উন্নতি হচ্ছে। তবে রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে এখনো পানি।
পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র জানায়, সোমবার বিকেল ৩টায় মনু নদীর কুলাউড়া-মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ২৯৫ সেন্টিমিটার ও শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধলাই নদীর কমলগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজের কাছে ৩৩৮ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদীর শেরপুর ব্রিজের কাছে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে জুড়ি নদীর পানি। ভাবনীপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, মনু নদীর কুলাউড়া আশ্রয়ণ ও কমলগঞ্জের ধলাই নদীর ঘোড়ামারার ভাঙন এলাকায় বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে। এ দুটি বাঁধ মেরামতের পর অন্য ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, ৭ উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৩ জন। ১০২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজার ৯১৭ জন লোক আশ্রয়ে রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় আর্থিক বরাদ্দ রয়েছে নগদ ৪৫ লাখ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চাল বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। বিতরণ করা হয়েছে ৮২৬ মেট্রিক টন চাল।
আজ ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ২:৩১ | সোমবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি