কলমে-মোঃ আবু শামা (শ্যামা)
একটি সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত আমাদের এই গল্প!
যে কান্নার শব্দ মানুষের কর্ণকুহরে স্পর্শ করে নাহ! হয়তো নিরীহ পশুপাখির হৃদয় ভেঙে দেয়! সেই কান্নাই চেয়েছি, তাই কেঁদে চলেছি! সন্ধ্যা ঘনিয়ে চলছে জোনাকির আলোর রাজত্ব, কিন্তু আমার হৃদয়ে চলছে বিষাদের যন্ত্রণা, তা যে কতটা, সে আর্তনাদ পৃথিবীর কোন কলমে প্রকাশ করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানা নেই, হয়তো কক্ষনও সৃষ্টি হবে নাহ। সৃষ্টিকর্তা এই ক্ষমতা কাউকে দেবে নাহ বৈকি!
অনেকদিন পর চলনবিলের মেঠোপথে হাঁটছি অন্ধকারে আমার পা দুটা ঠিক দেখতে পারছি নাহ, কিন্তু পা যে ঠিকঠাক চলছে নাহ তা টের পাচ্ছি, পা দুটো ধরে আসছে, জগৎ এর সকল বোঝা বুঝি আমার দুই পায়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের এক সরল, অতিসাধারণ এক কিশোরী মেয়ে তার নিস্পাপ চোখের অশ্রু দিয়ে আমার পথ এমন করে পিচ্ছিল কাদা মেখে, আমার সারা জীবনের সমস্ত গাঁথুনি ভেঙে কাদা মাটিতে পতিত করবে তা ভাবনাতেই ছিলো নাহ। আমার সারাজীবনের সঙ্গী জেদি আর একরোখা মনোভাব, আর হার না মানা কঠিন ইস্পাত মন কে পরাজিত করার মোক্ষম প্রতিরচনা করার জন্য এই সন্ধ্যা বেলা বেছে নিবে, আর আমাকে পরাজিত করার দারপ্রান্তে পৌঁছে দিবে!
আমার চল্লিশ বছরের জীবনের সব হিসাব নিকাশ এলোমেলো করেই কি জয়ই হচ্ছে জয়া! আমবশ্যার রাতে চাঁদের কথা শুনেছি কল্পকাহিনীতে কিন্তু নিজের চোখে দেখবো ভাবিনি! জয়া তার কোমল পায়ে শিশির ভেজা দূর্বাঘাস মারিয়ে শীতের আগমনী সন্ধ্যায় আমার শরীরে কি উষ্ণতার অনুভূতির ছোঁয়া দিয়ে সামনে এসে-আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন! এই যে শুনছেন কিছু বলুন, আপনি কি এখনও আমার উপর বিরক্ত হয়ে আছেন? আচ্ছা বলুন তো, বিরক্তই যদি হবেন তবে কেন আমার অনুরোধ রাখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসলেন, আমার কথা রাখার জন্য আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো, আর আমার পরিবারের সবার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।
কিছু বলবেন নাহ, তবে কি আপনি আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে এসেছেন, আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে কি শাস্তি দিবেন দিন, মাথা পেতে নেব! এই সাহেব, এই যে ইঞ্জিনিয়ার সাব! জয়া আমাকে হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিলো।
আমি জয়ার হাতের স্পর্শে নিজের চেতনা ফিরে পেলাম। শুধু বললাম, হ্যাঁ বলো জয়া, কেন ডেকেছিলে? জয়া বললো, শুধু ডেকেছি বলেই কি বিরক্ত হয়ে এসেছেন, মন থেকে কি একটুও আসেনি। জয়ার কথায় কি বলবো, কোন কিছু খুঁজে পাচ্ছি নাহ, ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি।
শুধু জয়া একটা বিষয় জানতে চাইলো, তার পরিবার আর আমার পরিবারের সবাই মিলে আমাদের বিয়ের কথা ফাইনাল করেছিলো, কিন্তু কেন আপনি সব ভেস্তে দিলেন, কেন, আমি কি খুব কুৎসিত চেহারা মানুষ! মানছি আমি আপনার মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করিনি মাত্র স্কুলে পড়ি কিন্তু এমনও তো হতে পারে আমিও একদিন আপনার মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো আর আপনার চেয়ে অনেক বড় আর যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ হবো!
এত কিসের অহংকার আপনার যে মাটিতে পা পড়ে না! মনে রাখবেন যে যোগ্যতার জন্য আজ আমাকে অবঙ্গা আর অবহেলা করে দুরে ঠেলে দিচ্ছেন, সেই যোগ্যতা আপনাকে খুরে খুরে খাবে। আমার ছোট্ট মনে আপনাকে সবগুলো জায়গা দিয়েছিলাম, যেদিন আপনার ছবি প্রথম দেখেছিলাম, আপনাকে দেখতে একটু বেশি বয়স্ক মনে হলেও, আপনার মুখে একটা মায়ার ছাপ স্পষ্ট করে দেখেছিলাম, আর এই মায়া আজ আমার জীবনের কাল হলো।
একটা উত্তর দিবেন কি? কাউকে মায়া করা কি পাপ? আপনার মায়ায় পরে কি আমি অপরাধ করেছি, তবে শাস্তি দিন, আপনার পায়ে পড়ি। আমাকে শাস্তি দিন আমাকে শাস্তি দিন সাহেব, শাস্তি দিন।
জয়া কাঁদতে কাঁদতে আমার পায়ে লুটিয়ে পড়লো, আমি হতোভম্ম হয়ে বললাম জয়া কি করছো, ছাড়ো আমার পা ছাড়ো, জয়া আরও শক্ত করে আমার দুই পা জড়িয়ে ধরে বললো ছাড়বো না জীবন গেলেও ছাড়বো নাহ। আমি তোমার পায়ের নিচে একটু আশ্রয় চাই সাহেব, আমাকে একটু আশ্রয় দাও, আমি কোন অধিকার চাই না। আমি শুধু তোমার দাসী হয়ে থাকবো, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো নাহ, শুধু মাত্র দাসী হয়ে তোমার কাছে থাকতে চাই। একটু আশ্রয় দাও, দয়া করো!
আমি জয়া কে দুই হাতে শক্ত করে ধরে বললাম, উঠো জয়া, উঠো এভাবে নয়, এমন করে না পাগলী মেয়ে! আমার কথা শুন বলছি, একবার আমার দিকে তাকাও, আমি মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে বললাম, জয়া একবার আমার চোখের দিকে তাকাও, একবার আমার চোখ দেখে মনটা বইয়ের পাতার মত পড়ে নাও, আমার ভেতর টা যে তোমার কথাই বলে, শুধু ভুল বুঝো না লক্ষীটি।
তুমি যে ভাবে বলতে পারছো, আমি যে সেভাবে প্রকাশ করতে পারি নাহ।
জয়া এবার অভিমানের সুরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, কেন পারো নাহ সাহেব, আমাকে বলো, আমি সব ঠিক করে নেব। আমাকে বলবে নাহ, আমাকে বিশ্বাস করো নাহ।
আচমকা বুকে ঝাপিয়ে পড়ে জয়া বলছে, এই যে তোমার বুকে থেকে হাজার টা কথা শুনতে পাচ্ছি, কেন? কিভাবে তোমার বুকে হাজারটা ব্যথা বুকে চাপা দিয়ে রেখেছো সাহেব। আমাকে তার কিছু ভাগ দাও, ভালোবাসা নাই দিলে অন্তত কিছু কষ্টের ভাগ দাও তোমার দাসী কে, কি দেবে নাহ!
আমি জয়া কে বুকে আলতো করে জড়িয়ে বললাম, জয়া, আমার পাগলী টা কি এবার শান্ত হবে, জয়া বলছে আর একটু থাকি তোমার বুকে, আমি অনেক শান্তি পাচ্ছি যে! জয়া লক্ষী সোনা আমার, এবার যে যেতে হবে রাত হয়ে আসছে।
জয়া বলছে আর একটু থাকি নাহ সোনা, আর যদি না আসো, হয়তো এই এটুকুই তোমার বুক থেকে শেষ আদর পাওয়া।
জয়া কে বললাম এতক্ষণে এই বুঝলে রে পাগলী, কথা দিলাম তো, তুমি ডাকলে আবার আসবো, তুমি ডাকলে কি আমি না এসে পারবো বলো তো জয়িতা।
জয়া এবার চোখ মুছতে মুছতে ঠোঁটে মূদু হাসিতে মেখে বললো, সত্যি তো আসবে সাহেব, আমি যেভাবে চাইবো সেভাবে আসবে! আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলম- হুম! আমি দুহাতে জয়ার কপোল স্পর্শ করে, বললাম আমার প্রতি আস্থা রাখো জয়িতা, তোমার পবিত্র মুখটা আমাকে তোমার কাছেই টেনে নিয়ে আসবে, মনে রেখো।
জয়া বললো ঠিক আছে, তাহলে তোমার বুক পকেট থেকে বেলীফুলের মালা টা আমার খোঁপায় পড়িয়ে দাও আর ডায়মন্ডের নাক ফুলটা ফেরত নিয়ে যাও।
আমি অবাক হয়ে বললাম কি করে জানলে জয়া, আমি তোমার জন্য এগুলো নিয়ে এসেছি, জয়া বললো দেখো সাহেব মেয়েরা অনেক কিছু বুঝতে পারে।
আমি বললাম, বেলীফুলের মালা খোঁপায় পড়িয়ে দিব আর ডায়মন্ডের নাকফুলটা নিয়ে যাবো কেন বলো তো! জয়া আমার নাক টিপে বলছে আরে বুদ্দু, আমি জানি বেলীফুলের মালা টা তোমার নিজের বাগানের গাছ থেকে নিজের হাতে মালাটা গেঁথেছো।
আমি বেলীফুলের মালা খোঁপায় পড়ে তোমার হাতের স্পর্শ নেব। আর তোমার ডায়মন্ডের নাকফুল টা যদি নেই তো তুমি আমার কাছে আর কোন দিন ফিরে আসবো নাহ। তোমার মা তো আমাকে ছেলের বউ করে নেবার জন্যই ডায়মন্ডের নাকফুলটা কিনেছে, জানি তুমি মায়ের বাধ্যানুগত সন্তান তোমার মায়ের হাতে কেনা নাকফুলটাই এক সময় বোঝা হয়ে যাবে আর তোমার মাকে দিয়ে আমাকে নাকফুল পড়িয়ে আমাকে স্ব সন্মানে তোমার ঘরে তুলে নেব।
আর আমি এটাও জানি তোমার মনের মধ্যে কি চলে সবসময়ই তোমার মার জন্য -*কেউ যদি তোমার মার দাসী হয় তো তুমি তার দাস হয়ে যাবে!* এমনটাই ভেবেছো সাহেব। সত্যি টা বলনা সাহেব- আমি শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
জয়া বললো-তাহলে শুন, আমি তোমার মায়ের দাসী হবো ঠিকই কিন্তু তোমার আমার দাস হতে হবে নাহ, আমিই বরং তোমার দাসী হয়ে থাকবো সারাজীবন। শুধু একবার বিশ্বাস করো, আমি তোমার আস্থার প্রতিদান দিব ইনশাআল্লাহ।
হাঁটতে হাঁটতে বুকটা খুব ব্যথা করছে, হঠাৎ মাটিতে বসে পড়লাম, এক হাতে বুকের বাম পাশটায় চেপে ধরে আছি, অনুভব করলাম বুক পকেটে একটা অতিরিক্ত কাগজ। কাগজটা বেড় করে পড়তেই বুকের সব ব্যথা দুর হয়ে প্রশান্তিতে মনটা ভরে গেলো।
জয়া লিখেছে- আমাকে যদি নাই ভালোবাসতে, অনুরোধের ঢেঁকি গিলে ঢাকা থেকে ছুটে আসতে পারতে না আমার কাছে সথা, তোমার সথী তোমার অপেক্ষায় রয়েছে, একদিন তোমার মায়ের হাতে কেনা ডায়মন্ডের নাকফুল টা আমাকে পড়িয়ে তোমার ঘরে তুলে নেবে, যে বিশ্বাসে আজ এসেছিলে সেই বিশ্বাসে তোমার পথ চেয়ে রইলাম, অপেক্ষায়-তোমার জয়া!
আমার ছেঁড়া কলিজা কতবার সুই সুতা দিয়ে শিলাই দিবে কিশোরী।
যতবার শিলাই দিবে ততবারই তো সুঁইয়ের ডগা, খঞ্জরের ডগার আঘাৎ হয়ে ফিরে আসে, সইতে হবে!
তা কি বুঝতে পারো কিশোরী। আর তাতে কতবার আঁচলে মুখ লুকিয়ে অশ্রুতে বুক ভিজিবে যাবে।
তাতে যে আমি ভেসে যাই তোমার অশ্রু জলের শ্রোতে। তার চেয়ে কি ভালো নাহ-আমাদের পথই আলাদা হোক! ক্ষতি কি! পালালেও যে আত্মা খুঁজে নেয় পতিত জমিনে, চাষাবাদ করবে বলে শক্ত হাতে হৃদয়ের উষ্ণতায়। এমন উষ্ণতার অনুভব করে ক’জন, খুঁজিবার তরে মন পোড়ে বেদনায়।
অথবা থাকনা অবহেলায় সে উষ্ণতা, কোথাও কারো কাছে। বিরহের দহনে পুড়ে মিছে ভেবে জল্পনা,
আমি না হয় পাথরের কাছে কান্না চেয়ে নেব! মরুর উষ্ণতায়! সেই ভালো তাতে কার কি আসে যায়!
ক্ষতি কি চলুক নাহ জগতের মিছে মায়া! আমি আকাশের মালিক কে বিচার দেব নাহ।
আমি তো নই অসহায় তোমরা যা ভাবো, আমি তো তেমন নই! হয়তো বা তার চেয়েও বেশি!
অথবা শুধুই যাতনার নীল রঙের পাখি! বেয়ে চলি নীরব ঘাতকের বহুরূপী সোনালী লতা!
আমি নাহয় কাশফুলের কাছে দুঃখ চেয়ে নেব! সে যে বহুরূপী হতে পারে নাহ।
তারও ইচ্ছে করে অনেক রঙে রঙ্গিন হতে, শুভ্র সুন্দর রঙে তার জীবন শুরু আর শেষও হয় তাতেই,
এটাই তার বড় দুঃখ!
চলবে…………………………………………………………………………………………………………………………………..
[বি: দ্র:আমি কাল্পনিক মানুষ, চরিত্র তৈরি করা আমার নেশার মত- পল্লীবালা, পদ্মবতী, মায়া, বেলী, রোজ, মিতা, মনা, জান্নাতি পাপিয়া, সু-চয়নিকা, আর কিশোরী! প্রত্যেকটি শব্দ (চরিত্র) আমার কলিজা ফেটে ক্ষতবিক্ষত করে এক একটি রক্তের কণার সৃষ্টি! যা আমার সন্তানতুল্য! কিন্তু বাস্তব জীবনে কোন কিশোরী নিজেই চরিত্র সৃষ্টি করবে, যাকে জয়া বলে ডাকবো ভাবনা তে ছিল নাহ, তাই মধ্যে রাতের অন্ধকার আকাশে তাকিয়ে আছি শেষ টা তে কি অপেক্ষা করছে আমরা কেউ জানি নাহ- আগামীর ঘটনা গুলো কি ঘটবে তাতে ২য় পর্বে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ!]
ডিজিটাল বাংলা নিউজ/ ডিআর / মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
কলমে-মোঃ আবু শামা (শ্যামা)একটি সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত আমাদের এই গল্প! যে কান্নার শব্দ মানুষের কর্ণকুহরে স্পর্শ করে নাহ! হয়তো নিরীহ পশুপাখির হৃদয় ভেঙে দেয়! সেই কান্নাই চেয়েছি, তাই কেঁদে চলেছি! সন্ধ্যা ঘনিয়ে চলছে জোনাকির আলোর রাজত্ব, কিন্তু আমার হৃদয়ে চলছে বিষাদের যন্ত্রণা, তা যে কতটা, সে আর্তনাদ পৃথিবীর কোন কলমে প্রকাশ করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানা নেই, হয়তো কক্ষনও সৃষ্টি হবে নাহ। সৃষ্টিকর্তা এই ক্ষমতা কাউকে দেবে নাহ বৈকি!চলবে…………………………………………………………………………………………………………………………………..