প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের জনগণ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করাই তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে পরিবেশ রক্ষায় বাসা-বাড়ি, চারপাশ ও অফিসের ফাঁকা জায়গায় গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের জনগণ ও প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা।
আজ বুধবার (৫ জুন) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সুন্দর জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সুন্দর পরিবেশ দরকার। কাজেই সেদিকে সকলেই সচেতন হোন, সেটাই আমি চাই। আমার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের মানুষ এবং প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা।’
সরকারপ্রধান এই সময় দেশবাসীর প্রতি বৃক্ষরোপণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘যারা এখানে উপস্থিত আছেন এবং এর বাইরেও সকলকে অনুরোধ করব, প্রত্যেকে যেখানেই পারেন অন্তত তিনটি করে গাছ লাগান। একটি ফলজ, একটি বনজ ও একটি ঔষধি গাছ। ফলের গাছ লাগালে ফল খেতে পারবেন, আর বনজ গাছ লাগালে সেটা বড় হলে বিক্রি করে টাকা পাবেন। ভালো টাকা পাওয়া যায় এখন। আর ঔষধি গাছ, সেটা ওষুধ তৈরি বা বিভিন্ন কাজে লাগে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই যদি গাছ লাগায়, শুধু আমাদের বাড়ি-ঘর না, কর্মস্থল, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ মসজিদ-মাদরাসার প্রাঙ্গণে যেখানেই খালি জায়গা আছে, সেখানে গাছ লাগান। আপনারা যদি গাছ লাগান, এত গরমে গাছের নিচে গিয়ে বসলে বেশ ঠান্ডা ও আরামদায়ক ছায়া পাবেন।’
ছাদ বাগান করাসহ গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিজের হাতে গাছ লাগানোর তৃপ্তিটাই আলাদা। তাঁর সংগঠন থেকে সেই ’৮৪-৮৫ সাল থেকেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বৃক্ষরোপণ, বন সম্প্রসারণ ও বন সংরক্ষণের বিষয়টি অতীতে উপেক্ষিত থাকায় অতীতে দেশে বৃক্ষ আচ্ছাদনের পরিমাণ যেখানে ছিল ১৭ ভাগ, এখন তা ২৫ ভাগের কাছাকাছিতে উন্নীত হয়েছে।
বিভিন্ন নার্সারিতে ১১ কেটি ২১ লাখ চারা বিক্রয়-বিতরণ, দুই লাখ ১৭ হাজার ৪০২ হেক্টরে ব্লক বাগান তৈরি, ৩০ হাজার ২৫২ কিলোমিটার সরু বাগান সৃজনের কাজ ইতোমধ্যে তার সরকার করে যাচ্ছে। তাছাড়া শুধু বনেই বনায়ন নয়, যখনই তার সরকার রাস্তা-ঘাট তৈরি করছে বা স্থাপনা নির্মাণ করছে, সেখানে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকে যে কী পরিমাণ বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা যখন আমরা নিই, সেখানে অবশ্যই আমাদের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি এবং যদি কোথাও আমাদের জায়গার জন্য গাছ কাটা পড়ে, তাহলে যে পরিমাণ গাছ কাটা হবে তার তিনগুণ গাছ লাগানোর শর্তটি আমরা জুড়ে দেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের স্লোগান হোক ‘সুস্থ পরিবেশ স্মার্ট বাংলাদেশ’।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন’ (২০২৩-২০২৪), ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ (২০২৩), ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার’ (২০২২-২০২৩) এবং উপকারভোগীদের মাঝে ‘সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশ’ এর চেক প্রদান করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম