আজ ২১ শে আগস্ট, সেই কলঙ্কিত ও বিভীষিকাময় এক দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে।
আজ সোমবার (২১ আগস্ট) শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী পালন করবে পুরো বাঙালি জাতি।
মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে বিএনপি-জামায়াত তথা চার দলীয় জোট সরকার রাষ্টযন্ত্র ব্যবহার করে নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা চালায়। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র। ঘাতকের গ্রেনেড হামলায় রীতিমতো রক্তগঙ্গা বইয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের প্রাঙ্গণ। সন্ত্রাসবিরোধী আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশকে ঘিরে কোলাহলপূর্ণ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল বীভৎস মৃত্যুপুরীতে। সুপরিকল্পিত ও ঘৃণ্য এই গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত ও শোকাবহ আগস্টে আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল পরাজিত ঘাতকচক্র। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হায়েনাদের হামলার ধরনও ছিল রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের মতোই।
সেদিন যা ঘটেছিলঃ সেদিনটি ছিল শনিবার। বিকালে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। এর আগেই সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা বক্তৃতা শেষ করেন। ৫টার পরে শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। আর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে। মানুষের দিগবিদিক ছোটাছুটি, প্রচণ্ড আর্তচিৎকার, মুহুর্তে সমগ্র এলাকার পরিবেশ ভারী করে তুলে। তখনও গ্রেনেড হামলা চলতে থাকে। মানবপ্রাচীর তৈরী করে নেতৃবৃন্দরা প্রিয় নেত্রীর চারপাশে। প্রাচীরের গায়ে আঘাত করতে থাকে ঘাতকদের গ্রেনেড। কিন্তু গ্রেনেডে কোন ক্ষতি করতে পারেনি দুর্ভেদ্য সেই মানবঢাল।
সেই ঢালটির প্রধান ব্যক্তিরা ছিলেন ট্রাকে অবস্থানরত মোহাম্মদ হানিফ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জন নেতাকর্মী এই হামলায় প্রাণ দেন এছাড়াও নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু ঘাতকরা এখানেই ক্ষান্ত হয়নি গ্রেনেডের আঘাতে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ করে ছুড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ির কাঁচ। এসময় শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ।
রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।
গ্রেনেড হামলায় প্রাণে রক্ষা পেলেও আহত হন শেখ হাসিনা। এছাড়া আহত হন আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, সম্প্রতি প্রয়াত এডভোকেট সাহারা খাতুন, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি