মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার একটি দুর্গম পাহাড়ে নির্মিত একটি জঙ্গি আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আজ শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ১০টা পর্যন্ত চালানো এ অভিযান জঙ্গি আস্তানা থেকে জঙ্গিদের পাশাপাশি আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছে সিটিটিসি ইউনিট।
শনিবার সকালে অভিযান শেষে ‘অপারেশন হিল সাইড’ নামে অভিযান শেষে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে আটক ১০ জনের বাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন ব্যাপক সংখ্যক লোকদের উগ্রবাদের দীক্ষা দিয়েছে। সেসব লোকজন হিজরতের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছেন। শুরুতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল মৌলভীবাজারের যে কোনো একটি পাহাড়ে তারা তাদের আস্তানাটি তৈরি করেছে। গতকাল আমরা চূড়ান্ত তথ্য পাই।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি, যিনি এই জঙ্গি আস্তানা থেকে তার পরিবারকে আনার জন্য গিয়েছিলেন।’
জঙ্গি আস্তান থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। এছাড়া ৩ শিশুও ছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘বিনা বলপ্রয়োগে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাদের হেফাজতে নেওয়ার পরে আমরা জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক ও ৫০টির মতো ডেটোনেটর উদ্ধার করি। যা দিয়ে গ্রেনেডসহ হাই এক্সপ্লোসিভ তৈরি করা হয়।’
‘এছাড়া ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী; কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নতুন একটি সংগঠন, এর নাম “ইমাম মাহদির কাফেলা”। বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে, সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন। এই সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়েছি। আশা করি, তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হবো।’
আটককৃত ‘জঙ্গি’দের নাম-পরিচয়:
১) শরীফুল ইসলাম (৪০), পিতা-ওমর আলী, মাতা-ছমিরুন, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা ও জেলা-সাতক্ষীরা। ২) হাফিজ উল্লাহ (২৫), পিতা-আবুল কাশেম, মাতা-জহুরা খাতুন, সাং-কানলা, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ। ৩) খায়রুল ইসলাম (২২), পিতা-নজরুল ইসলাম, মাতা-সানোয়ারা বেগম, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ। ৪) রাফিউল ইসলাম (২২), পিতা-সাইফুল ইসলাম, মাতা-রেবা সুলতানা, গ্রাম-মাইজবাড়ী, থানা-কাজীপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ। ৫) মেঘনা (১৭), স্বামী-খায়রুল ইসলাম, পিতা-মানিক মিয়া, মাতা-আলেয়া বেগম, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ। ৬) আবিদা (১২ মাস), পিতা-খায়রুল ইসলাম, মাতা-মেঘনা, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ। ৭) শাপলা বেগম (২২), পিতা-মজনু মল্লিক, স্বামী-আঃ ছত্তার, মাতা-আলেয়া বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। ৮) জুবেদা (১৮ মাস), পিতা-আঃছত্তার, মাতা-শাপলা বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। ৯) হুজাইফা (০৬), পিতা-আঃছত্তার, মাতা-শাপলা বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। ১০) মাইশা ইসলাম (২০), পিতা-সাইদুল ইসলাম, স্বামী-সোহেল তানজীম রানা, গ্রাম-চাদপুর (পিতার বাড়ী), থানা ও জেলা-নাটোর। ১১) মোছাঃ সানজিদা খাতুন (১৮), পিতা-আব্দুল জলিল, স্বামী-সুমন মিয়া, গ্রাম-নিজবলাই, থানা-শরিয়াকান্দি, জেলা-বগুড়া। ১২) আমিনা বেগম(৪০), পিতা-জলমত খা, স্বামী-শফিকুল ইসলাম, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। ১৩) মোছাঃ হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), পিতা-শফিকুল, মাতা-আমিনা বেগম, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি