আবেদনপত্র ও দরখাস্ত লেখার নিয়ম এর বিস্তারিত আলোচনা
কমবেশি আমরা সবাই দরখাস্ত লেখার নিয়ম এর সাথে পরিচিত। আমরা প্রায় সকলেই একদম ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে তা ব্যবহার করে আসছি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেকোন অনুরোধ বা অনুমতি প্রার্থনা করার জন্য লেখা পত্রকেই দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বলে। আর আমরা প্রত্যেকেই নানা প্রয়োজনে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র লিখে আসছি। বিষয়টি আমাদের প্রায় সবারই জীবনের অংশ। কিন্তু বাস্তব জীবনে অনেক সময়ই এই দরখাস্ত লেখার প্রয়োজনের সময় আমরা কোনটি সঠিক, কোনটি ভুল তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। তাই আজকে সহজে দরখাস্ত লেখার পদ্ধতি বা আবেদনপত্র লেখার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছি।
তবে প্রযুক্তির কারণে দরখাস্তের ব্যবহার এখন অনেক কমে এসেছে। তবুও সরকারি এবং বেসরকারি অনেক ক্ষেত্রে আমরা দরখাস্ত লিখে থাকি। আর এ ধরনের দরখাস্ত লেখার জন্য আমাদের কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা রয়েছে। আমরা যদি সঠিক নিয়ম শৃঙ্খলা দরখাস্ত লিখি তাহলে আমাদের আবেদনপত্র মঞ্জুর হয়। তাই আমাদের সঠিক ভাবে দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী শেখা উচিত।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম-কানুন
বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের দরখাস্ত লিখতে হলেও সকল দরখাস্ত লেখার মূল নিয়ম সবসময় একই থাকে। সকল ধরনের দরখাস্ততেই একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করতে হয়। এখানে দরখাস্ত লেখার নিয়ম দেয়া হলো
তারিখঃ দরখাস্তের প্রথম শুরুতেই তারিখ দিতে হয়। এছাড়াও কেউ চাইলে দরখাস্তের একদম শেষে তারিখটি উল্লেখ করতে পারে। এক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য।
প্রাপকঃ দরখাস্তের উপরেই কাকে উদ্দেশ্য করে দরখাস্তটি লেখা হচ্ছে তার নাম, পদবি ও ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। এর উপরে বরাবর লেখা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু এটি বাধ্যতামূলক কিছু নয়।
বিষয়ঃ প্রাপক লেখার পরে দরখাস্তের বিষয় লিখতে হবে। দরখাস্তের বিষয় দরখাস্তের মূল অংশে কি লেখা থাকবে তার ইঙ্গিত দেয়। ফলে যিনি দরখাস্ত পড়বেন তিনি কিছুটা ধারণা পাবেন দরখাস্ত সম্পর্কে। তাই দরখাস্ত বা আবেদনপত্রের ‘বিষয়’ অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সম্ভাষণঃ সম্ভাষণসূচক হিসেবে জনাব/জনাবা লিখতে হবে বিষয় লেখার পর।
বক্তব্যঃ দরখাস্তের মূল অংশ হল এটি। এখানে দরখাস্তের মূল বিষয়বস্তু বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এই অংশে কেন, কিসের জন্য আবেদনটি করা হচ্ছে তা অল্প কথায় কিন্তু সম্পূর্ণভাবে বুঝিয়ে লিখতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ দরখাস্ত লেখার সময়ে এর সৌন্দর্য ও মূলকথা সহজে বোঝানোর জন্য এই অংশটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে লেখা হয়। এতে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
নিবেদকঃ দরখাস্তের সর্বশেষ অংশে নিবেদকের নাম উল্লেখ করতে হয়। এই অংশে সাধারণত যে আবেদন করছে তার নাম,পদবি ও ঠিকানা দেয়া হয়ে থাকে।
বিভিন্ন ধরনের দরখাস্ত বা আবেদন পত্রের নমুনা
দরখাস্ত লেখার নিয়ম তো জানা হল। কিন্তু এর কিছু নমুনা না দেখলে আসল বুঝাটা সম্পূর্ণ হয় না পুরোপুরি। তাই এর উদাহরণস্বরূপ দরখাস্তের কিছু নমুনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হল।
ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বিভিন্ন কারণে অফিসে ছুটির দরখাস্ত লিখতে হয় যেমন- অসুস্থতার জন্য, বিয়েতে বা বিভিন্ন দাওয়াতে অংশগ্রহণের জন্য, মায়ের অসুস্থতা ইত্যাদি।
ছাত্র ছাত্রীরাও এরকম নানা কারণে বিদ্যালয়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে ছুটি নিয়ে থাকে। তাই এই দুই রকম দরখাস্ত এর নমুনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হল।
ছুটির আবেদন পত্র নমুনা
বিভিন্ন কারণে আমরা ছুটির জন্য আবেদন পত্র লিখে থাকি। এর কিছু নমুনা নিচে দেওয়া হলো। আপনি আপনার মতো করে পরিবর্তন করে নিজের জন্য লিখে নিবেন।
স্কুলে অনুপস্থিতির জন্য ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়মঃ
১. অসুস্থতার জন্য ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
তারিখঃ ১৫/০৫/২১ ইং
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক
নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়।
নোয়াপাড়া, চট্টগ্রাম।
বিষয়ঃ অনুপস্থিতির জন্য ছুটির আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমি গত ১২/০৫/২১ ইং থেকে ১৪/০৫/২১ ইং পর্যন্ত অসুস্থ থাকার কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারিনি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত ৩ দিনের ছুটি দানে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক
নামঃ মোঃ হামিদুর রহমান
শ্রেণিঃ ৯ম
বিভাগঃ বিজ্ঞান
রোলঃ ০৮
অফিসে অনুপস্থিতির জন্য ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়মঃ
এক এক প্রতিষ্ঠান একেক রকম হয়ে থাকে। আমরা এখানে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ কিভাবে অনুপস্থিতির ছুটি চেয়ে দরখাস্ত লিখেন সেই নিয়মটি দেখাচ্ছি আপনাদেরকে। তবে, সবগুলো একই নিয়ম।
বিভিন্ন অফিসে বিভিন্ন উপায়ে ছুটির দরখাস্ত লিখতে হয়। কারো জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর দরখাস্ত লিখতে হয় আবার কারো ব্যবস্থাপকের নিকট লিখতে হয়।
২. ব্যাংকে অনুপস্থিতির ছুটি চেয়ে দরখাস্ত লেখার নিয়ম
তারিখঃ ১০/১০/২১ ইং
বরাবর,
ব্যবস্থাপক
ঢাকা ব্যাংক, আন্দরকিল্লা শাখা।
আন্দরকিল্লা চট্টগ্রাম।
বিষয়ঃ অনুপস্থিতির জন্য ছুটি চেয়ে আবেদনপত্র।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক নিবেদন এই যে, আমি আপনার অধীনস্থ ঢাকা ব্যাংক এর আন্দরকিল্লা শাখার একজন সিনিয়র অফিসার। আমি গত ০৭/১০/২১ ইং থেকে ০৯/১০/২১ ইং পর্যন্ত অসুস্থ থাকার কারণে অফিসে উপস্থিত হতে পারিনি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আমার আকুল আবেদন, উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত ৩ দিনের ছুটি দানে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক
মোঃ আরিফ ইসলাম
সিনিয়র অফিসার
ঢাকা ব্যাংক
আন্দরকিল্লা শাখা
৩. পারিবারিক সমস্যার কারণে অফিসে ছুটি চেয়ে দরখাস্ত লেখার নিয়ম
তারিখঃ ২১/১০/২১ ইং
বরাবর,
………….., (যার অধিনস্থ আছেন, তার পদবি)
…………….. (প্রথিষ্ঠানের নাম)
…………… (ঠিকানা)
বিষয়ঃ অনুপস্থিতির জন্য ছুটির আবেদন।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক নিবেদন এই যে, আমি আপনার অধীনস্থ একজন ……………….. (আপনার পদবি)। আমি গত ১৬/১০/২১ ইং থেকে ২০/১০/২১ ইং পর্যন্ত পারিবারিক সমস্যার কারণে অফিসে উপস্থিত হতে পারিনি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত ৫ দিনের ছুটি দানে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক
……….. (আপনার নাম)
………… (আপনার পদবি)
…………… (প্রতিষ্ঠানের নাম)
চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
চাকরির দরখাস্ত লেখার বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। শুধু বিশেষ বললে তা ভুল হবে। সচরাচর নিয়মের বাইরে কিছু বাড়তি নিয়ম আছে। আজ আমরা আপনাদেরকে সেই নিয়মগুলো জানানোর চেষ্টা করবো।
চাকরির আবেদন পত্রে সংযুক্তি থাকা আবশ্যক। সেই সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতাও উল্লেখ করে দিতে হয়। নিম্নে একটি চাকরির আবেদন পত্রের নমুনা উপস্থাপন করা হলো।
চাকরির আবেদন পত্রের নমুনা
৪. সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করার জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়ম
তারিখঃ ২০/০৩/২০২১ ইং
বরাবর,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়।
রাউজান, চট্টগ্রাম।
বিষয়ঃ “সহকারী শিক্ষক” পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, গত ১লা মার্চ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার বিদ্যালয়ে গণিত বিষয়ে ২ জন “সহকারী শিক্ষক” নিয়োগ দেওয়া হবে। আমি উক্ত পদে একজন প্রার্থী হিসেবে মহোদয়ের নিকট আমার যাবতীয় তথ্যাদি প্রদর্শিত করলাম।
অতএব, মহোদয় সমীপে আকুল আবেদন, উল্লেখিত তথ্যাবলী বিবেচনা পূর্বক আমাকে উক্ত পদে নিয়োগ দানে আপনার মর্জি হয়।
নামঃ রেশমি আক্তার নদী
পিতাঃ শরীফ রহমান
মাতাঃ মেহের সুলতানা পাপিয়া
জন্ম তারিখ : ০৮/০৭/১৯৯৪ খ্রিঃ
জাতীয়তা : বাংলাদেশী
মোবাইলঃ ০১৯১৫৪০১৫৪৭
ইমেইলঃ [email protected]
বর্তমান ঠিকানাঃ
গ্রামঃ ণয়াহাট
উপজেলাঃ রাউজান
জেলাঃ চট্টগ্রাম
বর্তমান ঠিকানাঃ
ঐ
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
পরীক্ষার নাম বোর্ডের নাম পাশের সন জিপিএ
জেসএসসি কুমিল্লা ২০১০ ৫.০০
এসএসসি কুমিল্লা ২০১৩ ৪.৭৫
এইচএসসি ঢাকা ২০১৫ ৪.৯২
অভিজ্ঞতাঃ
আমি ২ বছর সানরাইজ কোচিং সেন্টার, পাহাড়তলি তে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে কোচিং করিয়েছি। তাছাড়া ৭ মাস যাবৎ “গশচি শিশুবাগ” স্কুলে কর্মরত আছি।
নিবেদক
রেশমি আক্তার নদী
সংযুক্তিঃ
ছবি ২ কপি।
একডেমিক সকল সনদপত্রের সত্যায়িত কপি।
চারিত্রিক সনদপত্র।
নাগরিকত্ব সনদপত্র।
৫০০ টাকার পোস্টাল অর্ডার।
অফিসে অগ্রিম ছুটির জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক সময় আমাদের অফিস থেকে অগ্রিম ছুটি নিতে হয়। আর এ ছুটির জন্য আমাদের দরখাস্ত লিখে আবেদন করতে হয়। এটি খুব সহজ একটি নিয়ম। অনেকেরই তা নিয়ে জানা আছে। কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্য অফিসে অগ্রিম ছুটির জন্য আবেদন করার নিয়মটি দেয়া হল।
এখানে এটি নমুনা হিসেবে প্রদর্শিত করা হলো। আপনারা নিজেদের প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করে তা সাজিয়ে নিবেন। আর এখানে উল্লেখিত ছুটির কারণটি আপনি আপনার নিজের প্রয়োজনমত পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
৫. অফিসে অগ্রিম ছুটির দরখাস্তের নমুনা
তারিখঃ ২০/১০/২০২১ ইং
বরাবর,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
ঢাকা ব্যাংক, আন্দরকিল্লা শাখা।
আন্দরকিল্লা চট্টগ্রাম।
বিষয়ঃ অগ্রিম ছুটির জন্য আবেদন
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার অধীনস্থ ঢাকা ব্যাংক এর আন্দরকিল্লা শাখার একজন অফিস কর্মকর্তা। আগামী ২৩/১০/২১ ইং তারিখে আমার ছোট বোনের বিয়ে। বিয়ের সকল আয়োজনের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়েছে। এজন্য ২১-২৪ অক্টোবর ২০২১ ইং পর্যন্ত আমি বিয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে অফিসে উপস্থিত হতে পারব না।
অতএব, মহোদয়ের সমীপে আমার আকুল আবেদন, উপরে উল্লেখিত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত চার দিনের ছুটি দান করে বাধিত করবেন।
নিবেদক
মেহেদী হাসান
অফিস কর্মকর্তা