রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ভূয়া র্যাব পরিচয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীসহ পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীমের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার এসএম রেজাউল হকের নেতৃত্বে ডিবির ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), মো. সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার ওরফে দিদার মুন্সী (৩৫), মো. ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), মো. আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপু (৪২) ও মো. দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)।
আজ রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাদার টেক্সটাইল লিমিটেডের মালিক সোহেল আহম্মেদ সুলতানের উত্তরার আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দুটি চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা সাড়ে ৮৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ভুক্তভোগীর এক ব্যবসায়িক পার্টনারের প্রতিনিধিকে ব্যাংকে বসেই সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের একটি গাড়িতে করে বনানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। গাড়িটি কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বনানীর দিকে যাওয়ার সময় বিকেল ৪টার দিকে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেট কার এসে কোম্পানির গাড়িটিকে সামনে থেকে গতিরোধ করে। এসময় কালো রংয়ের জ্যাকেট পরা ৫ থেকে ৬ জন ব্যক্তি নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে গাড়ি থামায়। র্যাব পরিচয় দিয়ে ডাকাত দল গাড়িতে থাকা অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহানকে বলে গাড়িতে অস্ত্র আছে। এমন অভিযোগে হাতকাড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাঙ্ক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়ি চালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩শ ফিট এলাকায় ফেলে চলে যায়। তখন সোহেল আহম্মেদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় এসে একটি মামলা দায়ের করেন।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্তে নামে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতিতে জড়িত দলটিকে শনাক্ত করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, সবুজের নেতৃত্বে ডাকাতি করা দলটি ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে ডাকাতি করে। এর কৌশল হিসেবে ডাকাতি ব্যবহৃত গাড়ির একাধিক নম্বর প্লেট ব্যবহার করে। কাজ শেষে নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।
ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন, স্ত্রীর গহনা কিনেছেন, জুয়া খেলেছেন। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৩ লাখ উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৩ জেলায় ১০ থেকে ১৫টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা রয়েছে।
আজ ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:৩২ | রবিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি