রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী এই তিনটি উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-৪ আসন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আ.লীগের ১১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করেন স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মমতাজ হোসেন লিপি অনেকটাই নিশ্চিত। আর জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুর রাজ্জাক (লন্ডনী) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে জানিয়েছেন। পরিসংখ্যান মতে, এ আসনে বরাবরই জাতীয় পার্টির আধিপত্য। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম হোসেন। পরের নির্বাচনেও জয় পায় দলটি। সেবার জামায়াতের প্রার্থীকে হারান গোলাম হাবিব। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির গোলাম হাবিবকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকির হোসেন নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি) দখলে যায় আসনটি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি ছিনিয়ে নেন জাকির হোসেন।
বর্তমানে এই আসনটি আ.লীগের দখলে রয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান সাংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গনশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রাজীবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ও বিপ্লব হাসান পলাশ, অধ্যক্ষ ফজলুল হক মনি, অ্যাডভোকেট মাছুম ইকবাল, রৌমারী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাদের, চরবন্দু হাজী মুরাদ লতিফ ও এ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন।
সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে, দলগুলোতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ডজনের বেশী থাকলেও হাতে গোনা কয়েকজন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মাঠে আছেন রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী। তিনি একাধিকবার যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী আমাকে ভাল না বাসলেও সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। আশা করি মনোনয়ন পেলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ আসনটি উপহার দিব।
নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গরম করে তুলছেন সাবেক মন্ত্রী মরহুম আবদুর রাজ্জাকের শ্যালক মুরাদ লতিফ। তিনি এলাকায় ‘চরবন্ধু’ হিসেবে খ্যাত। চরে বসবাস থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে ওঠাবসাসহ তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার কারণে স্থানীয়ভাবে তাকে এ টাইটেল দেয়া হয়। জানতে চাইলে মুরাদ লতিফ বলেন, আসনটি চর, দ্বীপচর নিয়ে গঠিত। চরের অধিকাংশ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। নদী এ অঞ্চলের প্রধান দুঃখ। ২০০১ সালে আবদুর রাজ্জাক পানিসম্পদমন্ত্রী থাকাকালে আমি সাড়ে ৯ কোটি টাকার রাজীবপুর শহররক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করি। এছাড়া চিলমারী বন্দর রক্ষা প্রকল্পসহ আরো কিছু খাতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাজ করি। মনোনয়ন পেলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও রৌমারী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে সমাজবদলের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সাইফুল ইসলাম বলেন, গোটা এলাকায় আমি মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে আরও কাজ করতে চাই। আগে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত রাখলেও এখন মূল দলের হয়ে কাজ করছি। মানুষের ভালোবাসাই আমার প্রেরণার উৎস। বিগত বছরগুলোতে ২০ দলীয় জোট থেকে এ আসনে প্রার্থী দিয়ে আসছিল জামায়াতে ইসলাম। তবে ইসির নিবন্ধন না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াত নিজ দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এছাড়া জোটের প্রধান শরিক বিএনপির স্থানীয় নেতারাও চান না এখানে জামায়াতের প্রার্থী।
রাজীবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, দলের নেতাকর্মীরা আর জামায়াতের প্রার্থী দেখতে চায় না। এ আসনে বিএনপির প্রচুর ভোট রয়েছে। জোট থেকে বিএনপির প্রার্থী দিলে বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব।
এদিকে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের ভোটারদের অভিমত, এবারের নির্বাচনে তারা সৎ, যোগ্য ও মানুষের ভাগ্যান্নয়নে নিবেদিত এমন প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি