খোশ আমদেদ মাহে রমজান এবং আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এইচএসটিউ মজার ইস্কুলের আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত দুঃস্থ অসহায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৪ টা ৩০ মিনিট থেকে গরীব ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল মাঠে এই ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উক্ত অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হাবিপ্রবি মজার ইস্কুলের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মামুনুর রশিদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ, সহকারী প্রক্টর ড. মো. ইয়াসিন প্রধান, ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, হাবিপ্রবি মজার ইস্কুলের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন।
✪ আরও পড়ুন: যে বদ অভ্যাস শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, “একজন শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার যে প্রয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেখাচ্ছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা ভালো মানুষ হয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবে, এবং তাদের দেখাদেখি সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুরা একদিন দেশের হয়ে সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাবারা, তোমরা ভালো মানুষ হও। আমি আশাবাদ ব্যক্ত করবো, তোমরা ভালো মানুষ হবে। মজার ইস্কুল শিশুদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।”
ঈদ সামগ্রী বিতরণ শেষে মজার ইস্কুলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল মাঠেই ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মজার ইস্কুলের সাবেক, বর্তমান, এবং অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
উল্লেখ্য, সুবিধাবঞ্চিত অসহায় দরিদ্র পথ শিশুদের, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন এবং ছোট্ট মাথায় বুনে রাখা স্বপ্নকে লালনের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর, “নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়া, মজার ছলে শেখাবো মোরা” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুণ, স্বপ্নচারীর হাত ধরে গড়ে উঠে হাবিপ্রবি মজার ইস্কুল।
বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলের আশেপাশের এলাকাগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র শিক্ষার্থী ও পথ শিশু, যারা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের নানা ভাবে বুঝিয়ে মজার ইস্কুলে নিয়ে আসা হয়। হাবিপ্রবির অভ্যন্তরে অবস্থিত হাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাথমিক স্কুলে অস্থায়ী ভাবে তাদের ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। স্কুল ছুটির পর বিকেল থেকে শুরু হয় মজার ইস্কুলের ক্লাস।
✪ আরও পড়ুন: ঈদের আগেই ৩৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে বেতন-ভাতা দেওয়া হবে
মজার ইস্কুলের শিক্ষকদের দৃঢ় প্রত্যয়, শিক্ষার্থীদের জন্যে ভালোবাসা, মজার ছলে পড়ানো, ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কোনো শিক্ষার্থী একবার ক্লাসে আসলে আর ফেরত যেতে চায়না। শিক্ষকদের বন্ধুত্বসুলভ আচরণ টেনে আনে শিক্ষার্থীদের। এই স্কুলে আসা শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম, রাবার, পেন্সিল সহ যাবতীয় সুবিধা পায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিদীপ্ত ও মানসিক পরিশুদ্ধির জন্যে বিভিন্ন খেলাধুলা ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রম ও পকেট খরচের টাকায় চলে এই সংগঠন। কেউ হয়তো সন্ধ্যার নাস্তার টাকা বাঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের বই, খাতা কেনায় সেই টাকা ব্যয় করেন। কেউ কেউ এটাকে আত্মশুদ্ধির জায়গা হিসেবেও কল্পনা করেন। বর্তমানে এই স্কুলের শিক্ষক আছেন ষাটেরও অধিক। শিশু শ্রেনী থেকে শুরু করে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকরা পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস নেন এখানে। প্রতিদিন বিকেল ৪ টা ৩০ মিনিট থেকে ৬ টা পর্যন্ত চলে পথশিশুদের ক্লাস কার্যক্রম।
ডিবিএন/এসডিআর/ মোস্তাফিজ বাপ্পি