ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে মাঠে মাঠে সোনালী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা দিগন্তজোড়া সুবিশাল মাঠে ধান ক্ষেত গুলো যেন সোনালি রঙে সেজেছে। চলতি আমন মৌসুমে আমন ধানের ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকদের মনে আনন্দ বিরাজ করছে। কৃষকের ঘরে ঘরে লেগেছে নবান্নের ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি খাওয়ার উৎসব। সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে বলে কৃষকেরা জানায়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় ৩০ হেক্টর বেশি। এরমধ্যে উফসী বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে। এ ধরনের জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রিধান-১০৩, ব্রিধান-৯৩, ব্রিধান-৫১, ব্রিধান-৫২, ব্রিধান-৭১, ব্রিধান-৭২, ব্রিধান-৭৪, ব্রিধান-৮৭, ব্রিধান-৭৫, বিনা ১৭ ও ১৬ জাতের ধান। এবার প্রতি বিঘাতে ধানের ফলন হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ মণ পর্যন্ত। মানভেদে প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকায়।
সরেজমিনে, রাণীশংকৈল পৌরসভা, ধর্মগড়, নেকমরদ, হোসেনগাঁও, লেহেম্বা, বাচোর, কাশিপুর, রাতোর, নন্দুয়ার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া সবুজ আর হলুদ রঙে সেজেছে আমন ধানের ক্ষেত। ধান ক্ষেতের সোনালী সৌন্দর্যে শোভা পাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। এখন মাঠজুড়ে আমন ধান সোনালী রঙ ধারণ করেছে। জমিতে চারা লাগানোর পর থেকেই কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় সময়মতো নিবিড় পরিচর্যা, সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এ কারণে আবাদও ভালো হয়েছে। এছাড়াও এবার ক্ষেতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ মৌসুমে কৃষকদের জমিতে আমন ধানের ফলন অনেক ভালো। ধান ক্ষেতে গাছের শীষ ধানে নুইয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে।
কৃষকরা জানান, এবার ধানের রোগবালাই কিছুটা কম ও আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসের দিকে আমন ধান কাটা হয়। এবছর অনেক মাঠেই এক মাস আগেই এই ধান পাকতে শুরু করেছে। সব খরচ বাদ দিয়ে এবার লাভবান হবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা। ধান তোলা শেষ হলে একই জমিতে আগাম জাতের আলু, সরিষা, গম ,ভুট্টা আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
হোসেনগাঁও ইউনিয়নের কৃষক জাবেদ আলী জানান, এবার আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম থাকায় আমন ধান চাষে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
লেহেম্বা ইউনিয়নের কৃষক সফিকুল বলেন, আগাম আমন ধান চাষ করেছি, ধানের ফলন আর দামও অনেক ভালো থাকায় গত বছরের তুলনায় বেশ লাভবান হয়েছি। ধান কেটে ওই জমিতে আলুর চাষ করবো।
নন্দুয়ার ইউনিয়নের ভোলাপাড়া গ্রামের বড় কৃষক আনিসুর রহমান জানান, আমি মোট ৭ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমান ধান আবাদ করেছি। আশা করছি ধান ক্ষেতের গাছ ও শীষ দেখে মনে হচ্ছে গতবারের তুলনায় ফলন বেশী ফলন পাবো।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সহীদুল ইসলাম জানান, আমরা অধিক ফলনের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধান চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। ধানের অন্যতম কীট শত্রু বাদামী ঘাস ফড়িং (কারেন্ট পোকা) বিস্তার রোধে উপজেলা ব্যাপি মাঠ দিবস, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা করে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করি। কৃষকেরা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত পরিচর্যা ও কীটনাশক প্রয়োগ করে। ফলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। এবার উপজেলার সর্বত্রই আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধান আবাদে এ বছর লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়েছে।
সেই সাথে কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ কৃষকদের সব সময় মাঠে তদারকি, পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছেন। এছাড়াও সরকারি প্রণোদনা ও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ধান চাষ বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি ।