আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনি হাওয়া। বড় বড় রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাদের মন জয়ে এলাকার উন্নয়নে দিচ্ছেন নানামুখী জনশ্রুতি।
নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলে থাকা বিএনপি মামলা-হামলার স্বীকার হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। রাজপথ দখলে রেখে মাঠে নিজেদের ভিত শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
দলীয় নেতাদের দাবি, উন্নয়নের চিত্র দেখে জনগণ টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবে। তবে এ আসনের ভোটাররা বরাবরই রাজনৈতিক সচেতন। গত সাড়ে ১৪ বছরে এই নির্বাচনি এলাকার সার্বিক চিত্রও পাল্টে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় এই নির্বাচনি এলাকার রাস্তাঘাটসহ জীবনমানের ধরনও বদলে গেছে।
জানা যায়, রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, এক পৌরসভা ও তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৪ হাজার ২৬৭। নির্বাচনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর চারবারই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনেই পর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও এই বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা। এর আগের তিনবারের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপিও বসে নেই। তারাও আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনেও আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে হতে পারে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
চলনবিল অধ্যুষিত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটির বর্তমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ। তিনি ছাড়াও আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন রায়গঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমরুল হাসান তালুকদার ইমন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য ড. হোসেন মনসুর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) নজরুল হাসান মানিক, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এ টি এম লুৎফর রহমান দিলু, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয়, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য হেভিওয়েট প্রার্থী আলহাজ আব্দুল মান্নান তালুকদার। এ ছাড়া ওরিয়েন্টাল গ্রুপ অব কোম্পানির পরিচালক ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রকিবুল করিম খাঁন পাপ্পু, রায়গঞ্জ উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হক, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির।
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন। তিনি এ আসনের তিনবারের এমপি প্রয়াত ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে। তার সমর্থকরা বলছেন, শিক্ষিত ও মার্জিত উদীয়মান নেতা ইমন তালুকদার এ আসনের যোগ্য প্রার্থী। তিনি বলেন, বাবা দীর্ঘদিন এমপি থাকার কারণে নির্বাচনি এলাকার অধিকাংশ গ্রামে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থক গড়ে উঠেছে। তাড়াশের চেয়ে রায়গঞ্জ এলাকায় ভোটার সংখ্যাও বেশি। এজন্য আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনের সর্বস্তরের মানুষ আমার পাশে থাকবে এবং নিশ্চিত বিজয়ী হবেন বলে তিনি দাবি করেন।
এই নেতা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী আমাকে যদি মনোনয়ন দেন তা হলে বিপুল ভোটে টানা চতুর্থ বারের মতো আওয়ামী লীগকে এ আসনটি উপহার দিতে পারব। আর যদি আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে দলের অন্য কাউকে দেওয়া হয় তবুও ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে বিজয়ী করব।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রকিবুল করিম খাঁন পাপ্পু বলেন, আমি তৃনমূল থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জরিত। তৃণমূলের বিএনপির নির্যাতিত ও আওয়ামী লীগের গায়েবী মামলা আর হামলায় আহত প্রতিটি কর্মীর পাশে থেকে সকল বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের বিএনপির সকল নেতাকর্মীরা আমার সাথে হাত মিলিয়ে আগামীতে এ আসনে বিএনপিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান তালুকদার বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে জনকল্যাণে যে কাজ করেছি, তার সাক্ষী এ অঞ্চলের জনগণ। তার দাবি, মনোনয়ন পেলে এ অঞ্চলের মানুষ তাকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন।
*** আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৩:১৯ | শুক্রবার ***
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি