ইংল্যান্ডকে ৩৯৯ রানের বিশাল টার্গেট জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে তাদের। ২০২২ সালে এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয়ের সেই সুখস্মৃতিকে অনুপ্রেরণা নিয়েই হয়তো পাহাড়সম টার্গেট তাড়ায় ব্যাটিং শুরু করেছিল সফরকারীরা। প্রতিপক্ষ এক হলেও ভারতের মাটিতে এবার আর রেকর্ড গড়া হলো না। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস থেমেছে ২৯২ রানে।
হায়দরাবাদে ২৮ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু করেছিল ভারত। বিশাখাপত্তমে ঘুরে দাঁড়ানো টেস্টে হায়দরাবাদের হারের বদলা নিলো স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে চার দিনেই হারাল ভারত। ১০৬ রানের জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল রোহিত শর্মা বাহিনী।
তরুণ ওপেনার যসশ্বী জয়সাওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৯৬ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। জেমস অ্যান্ডারসন ও শোয়েব বশির তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। জবাবে জাসপ্রিত বুমরাহ’র ৬ শিকারে ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ২৫৩ রানে। বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে রানের পসরা সাজালেন দীর্ঘদিন অফফর্মে থাকা শুভমান গিল। তার সেঞ্চুরিতে স্কোরবোর্ডে ২৫৫ রান তোলে ভারত। ফলে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩৯৯ রান। পাহাড়সম টার্গেট তাড়ায় বাজবল খেলতে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে বেন স্টোকসরা।
গতকাল (৪ ফেব্রৃয়ারি) শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকে ইংল্যান্ড। শুরুটা ভালো হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি বেন ডাকেট। ২৭ বলে ২৮ রানে ফেরেন এই ওপেনার।
১ উইকেটে ৭৮ রান নিয়ে দিন শেষ করে ইংলিশরা। আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন জ্যাক ক্রলি ও নাইট ওয়াচম্যান রেহান আহমেদ। দু’জনে মিলে ভালোই খেলছিলেন। একদিক থেকে বুমরাহ ও অন্যদিকে অক্ষর প্যাটেল আক্রমণ চালালেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে দিনের প্রথম ধাক্কা দেন অক্ষর। ২৩ রান করে আউট হন রেহান।
তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ড জানিয়েছিল, লক্ষ্য বড় হলেও খেলার ধরন বদলাবে না তারা। সেটাই দেখা যায় ইংরেজ ব্যাটারদের খেলায়। ওলি পোপ ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলতে শুরু করেন। ফলে রান উঠছিল।
কিন্তু সেই সঙ্গে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছিল। সেটাই হলো শেষপর্যন্ত। ২১ বলে ২৩ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আউট হন আগের ম্যাচের নায়ক পোপ। স্লিপে ভালো ক্যাচ ধরেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত।
পরপর দুই উইকেট হারালেও রান তোলার গতি কমায়নি ইংলিশরা। যদিও ইনজুরির কারণে ঠিক স্বস্তিতে ছিলেন না দলের সেরা ব্যাটার জো রুট। ১০ বলে ১৬ রান করে অশ্বিনের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন এই ব্যাটার। ইংল্যান্ডের ইনিংস তখনো টানছিলেন ক্রলি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগে দু’টি বড় ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড।
প্রথমে ৭৩ রানে ব্যাট করা ক্রলিকে ফেরান কুলদীপ যাদব। আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে সফল হন রোহিত। এরপর বুমরাহর ভেতরের দিকে ঢুকে আসা বল বুঝতে না পেরে ২৬ রানের মাথায় এলবিডব্লিউ হন জনি বেয়ারস্টো।
ইংল্যান্ডের আশা টিকে ছিল বেন স্টোকসের ওপর। তখনো ম্যাচটা যে হাতছাড়া হয়ে গেছে এমনটা মনে হয়নি। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দৃষ্টিকটু রান আউট হয়ে যান তিনিও। শ্রেয়াস আয়ারের থ্রো যে সরাসরি উইকেটে লেগে যাবে তা বুঝতে পারেননি স্টোকস। সেই কারণে কিছুটা ধীরে দৌড় শুরু করেছিলেন। সেটাই কাল হলো।
স্টোকস আউট হওয়ার পরে জুটি বেঁধেছিলেন বেন ফোকস ও টম হার্টলি। তারাও বেশ ভালো খেলছিলেন। অযথা তাড়াহুড়ো করেননি। দু’জনের জুটি থেকে আসে ৫৫ রান।
ভারতের যখন ব্রেকথ্রু দরকার, তখনই ডাক পড়ে বুমরাহর। এবারও জুটি ভাঙলেন তারকা এই পেসার। ব্যক্তিগত ৩৬ রানের মাথায় ফোকসকে বোকা বানিয়ে আউট করেন তিনি।
শোয়েব বশিরের উইকেট নেন মুকেশ কুমার। ৩৬ রানে থাকা টম হার্টলিকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন বুমরাহ। ২৯২ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯টি উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৩৯৬ ও ৭৮.৩ ওভারে ২৫৫ (গিল ১০৪, শ্রেয়াস ২৯, আশ্বিন ২৯)
ইংল্যান্ড: ২৫৩ ও ২৯২ (ক্রলি ৭৩, ফোকস ৩৬, হার্টলি ৩৬)
ফল: ভারত ১০৬ রানে জয়ী
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম