মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা নদী তীর সদর উপজেলার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়ন ও রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের বন্যায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষ। উজানের পাহাড়ি ঢল আর গেল ক’দিনের ভারী বর্ষণে চোখ রাঙ্গানিতে নদী দেখাচ্ছে তার ভয়ঙ্কর রাক্ষুসে রূপ। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি।
প্রতিবছরই বর্ষার মৌসুমে নদীর পুরাতন বাঁধ (ডাইক) ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দারা বন্যাকবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহান। বাঁধ নির্মাণের স্থায়ী প্রতিকার চেয়ে নানা স্থানেও ধরনা দিয়েও শুধু প্রতিশ্রুতি আশার বাণী ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই দীর্ঘদিন থেকে বর্ষা এলেই ওই স্থানের নদীর পুরাতন ডাইক ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। বন্যায় সব হারিয়ে মানবেতর জীবনের অংশে যোগ হয় নতুন ভাবে ক্ষতস্থানে ক্ষতির মুখোমুখি কয়েক হাজার মানুষ।
এলাকাবাসী জানান- সোমবার রাত থেকেই কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হয় কুশিয়ারা নদীর পুরাতন ডাইকের। মঙ্গলবার ভোর থেকে অল্প অল্প করে একাধিক স্থানে ভাঙন শুরু হয় খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা ও ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায়। দ্রুত সময়েই হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রামসহ আশপাশের গ্রামের ঘরবাড়ি, ক্ষেত কৃষি, মৎস্যখামার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই গ্রাস করে নেয় বানের পানি। বন্যার কবলে পড়ে ওই গ্রামগুলোর প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক বাসিন্দা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘর বাড়ি ছেড়ে তারা অন্যত্র আশ্রয় নেন। বন্যাকবলিত হওয়া এলাকার প্রায় চার শতাধিক পরিবার আশ্রয় নেন স্থানীয় হামরকোনা জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার আশ্রয়কেন্দ্রে। এছাড়াও আজাদ বখ্ত উচ্চ বিদ্যালয়, দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ব্রাহ্মণগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে সিলেট-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই অস্থায়ী ঝুঁপড়ি ঘর ও ডেরা বানিয়ে ঠাঁই নেন। ওখানে কোনোরকম আশ্রয় নেয়া লোকগুলো অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
ব্রাহ্মণগ্রাম ও হামরকোনা গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান- প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ওখান দিয়ে পুরাতন বাঁধ (ডাইক) ভেঙে আমাদের সবকিছু বিলীন করে নেয়। প্রতি বছরই ওই পরিস্থিতিতে পড়ে যুদ্ধ চালিয়ে জীবনটা কোনোরকমে টিকে থাকি নিজের বসতভিটায়। তারা বলেন- আমাদের ওপর প্রতিনিয়ত বয়ে চলা এই দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চরমভাবে উদাসীন। গতকাল হামরকোনা ও ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় দেখা মিলে ভেঙে যাওয়া বাঁধ (ডাইক) গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে মেরামত করছেন।
বাঁধে কাজ করা স্বেচ্ছাশ্রমী অনেকেই বলেন- আমাদের এই মেরামত কাজগুলো অস্থায়ী। এই এলাকার দীর্ঘদিনের প্রানের দাবি এই ঝুঁকিপূর্ণ (ডাইক) বাঁধটি নির্মাণের। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-মরণ সমস্যার প্রশ্নে এই বাঁধটির স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ!
আজ ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:৫৯ | সোমবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান (বাপ্পি)