ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের কুখ্যাত মোটরসাইকেল চোর আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে আবারো জনতার হাতে আটক হয়েছে। এসময় তার সহকর্মী রেজওয়ান (৩০) কেও আটক করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার এবং গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। গত বুধবার ৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পর পৌরশহরের এক ইফতার পার্টিতে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
রাণীশংকৈল এএসপি (সার্কেল) রেজাউল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
রাজ্জাক পৌর শহরের ভান্ডারা (খুনিয়াদীঘিসংলগ্ন) এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে ও রানীশংকৈল পৌরসভার বহিষ্কৃত কাউন্সিলর। এবং তার সহকর্মী রেজওয়ান একই এলাকার বাসিন্দা।
জানা গেছে, ঘটনার দিন পৌর শহরের কুয়েতি মসজিদের পাশে আজিজুল হক তার বাড়িতে মরজান মাস উপলক্ষে এক ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। তার বাড়ির বাইরে তার নিজেরসহ অতিথিদের মোটরসাইকেল রাখা ছিল।এরমধ্যে চোর আব্দুর রাজ্জাক তার দুই সহকর্মীকে নিয়ে ওই স্থান থেকে আজিজুলের মোটরসাইকেলটি তার এক সহকর্মীকে দিয়ে সরিয়ে ফেলার সময় এক মহিলা রাস্তায় দেখে ফেলে। ওই মহিলা দ্রুত এসে আজিজুলকে খবর দিলে তিনি বাইরে দাঁড়ানো রাজ্জাক ও তার সহকর্মীকে মোটরসাইকেলসহ ধরে ফেলেন। চিৎকারে চারদিক থেকে লোকজন ছুটে এসে চোর রাজ্জাক ও তার সহযোগী রেজওয়ানকে ঘেরাও করে। ক্ষিপ্ত জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য রাজ্জাক ও তার সহকর্মী আজিজুলের বাড়িতে ঢুকে যায়।
এদিকে উত্তেজিত জনতা রাজ্জাকের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এবং রাজ্জাক ও তার সহকর্মীকে ওই বাড়ি থেকে বের করে গণপিটুনি দিবে বলে হাজার হাজার জনতা বিভিন্নভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে। এতে মূহুর্তেই সেখানকার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে মোটরসাইকেলের আগুন নেভায়।
এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে এসপি সার্কেল রেজাউল হক, ইউএনও রকিবুল হাসান, ওসি সোহেল রানা সঙ্গীয় পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের ৩০-৩৫ জনের সদস্য ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন। উত্তেজিত হাজারো জনতা তাদের দুজনকে বাড়ি থেকে বের করে গণপিটুনি দিতে চায়। এতে পুলিশ বাঁধা দেয়। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপি পুলিশ ও জনতার মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়াছুড়ি করে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে জনতাকে সরিয়ে রাজ্জাক ও তার সহকর্মী রেজওয়ানকে রাত দশ টায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এএসপি সার্কেল রেজাউল হক আরো বলেন, রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের দু’জনকে থানা কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে। রাজ্জাকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে মর্মেও তিনি জানান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত ঠাকুরগাঁও,পঞ্চগড়,দিনাজপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির তার একটি সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্র রয়েছে। এবং সে এ চক্রের মূল হোতা। তার এই চক্রটি প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে এবং ভুক্তভোগীদেরকে তার নিজের রাখা সোর্স মারফত ফোন দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে মোটরসাইকেল ফেরত দিয়ে দেয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্জাক এ কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এর আগে অনেকবার মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে সে বিভিন্নভাবে ধরা পড়ে এবং কিছুদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে আবার একই কাজ করে। এ ব্যপারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী কুখ্যাত রাজ্জাক চোরের সর্বোচ্চ শাস্তি ক্রসফায়ারের দাবি জানান।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:৫৪ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি