বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বাজার-ভিত্তিক ঋণের ওপর নির্ভরতার কারণেই বেড়েছে সুদ পরিশোধের ব্যয়। টাকার অবমূল্যায়ন এবং সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) সুদহার বাড়ার ফলে এই ধরনের ঋণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
রোববার (২১ এপ্রিল) দেশের বৈদেশিক ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশ শুধুমাত্র সুদ বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে ১০৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। এ হিসেবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১১৭ শতাংশ।
এর আগে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এবং পুরো অর্থবছরে তা ছিল ৯২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুদহার বেড়েছে জানিয়ে ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সোফর বেড়েছে। বর্তমানে সোফর সুদহার ৫ শতাংশের বেশি। যা এই যুদ্ধের আগে ১ শতাংশের কম ছিল।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজার ভিত্তিক ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে যে ঋণ পায় তার প্রায় ৭৫ শতাংশ বাজারভিত্তিক ঋণ। এ ছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে বাজারভিত্তিক সুদে ঋণ নেয়।
বিশ্বব্যাংক থেকেও স্বল্প পরিসরে বাজার ভিত্তিক ঋণ নেয় বাংলাদেশ। এদিকে সুদ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়ে হয়েছে ২৫৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৭৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে বিভিন্ন ঋণের আসল পরিশোধ করা হয়েছে ১৫১ কোটি ডলার।
ইআরডির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে আসল ও সুদ মিলিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়ে ৩৫৬ কোটি ডলার হতে পরে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৭.২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। এই সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২.৬২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি।
এ ছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২.০৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৫.৬৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম