শিক্ষার্থীদের মাঝে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। নয় মাসে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আর এদের বেশির ভাগই স্কুলছাত্রী।
পড়াশোনার চাপ আর পরিবারের গগনচুম্বী প্রত্যাশাই এই ভয়াবহ পরিণতির জন্য দায়ী বলে জানান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেন্টার না থাকা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনীহায় এই প্রবণতা বাড়ছে বলে মত মনোবিজ্ঞানীদের। আর ফলনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।
বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১৯ স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছে তালিকার শীর্ষে। এরপরই রয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা-৮৪ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছেন ৫৭ আর সবচেয়ে কম ৪৪ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া এই ৪০৪ জনের মধ্যে ২৪২ জনই নারী শিক্ষার্থী।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নামমাত্র এই সেবা থাকলেও অপ্রতুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ মনোবিজ্ঞানীদের।
মনোবিজ্ঞানী কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সব স্কুলে কাউন্সিলর নেই। আবার কাউন্সিলর থাকলেও অনেক সময় তা কাজে আসে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জানতে হবে তার সমস্যা কোথায় এবং কার সঙ্গে পরামর্শ করলে তিনি ভালো সমাধান পাবেন। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ভয়ে কিছু বিষয় লুকিয়ে রাখে। এতে কাউন্সেলিং ভুল পথে যায়। তাই পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটা বড় ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, হতাশা থেকে আমাদের কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। পরিবারে কোনো সন্তান হতাশাগ্রস্ত থাকলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে জানান তিনি।
ফলস্বর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এ জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য আধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
অবশ্য সংকট উত্তরণে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সেবাদানের লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।