ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ৮ই সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। বিশ্বে সাক্ষরতা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবীয় অধিকার হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। এটি ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ও মানবীয় উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এমনকি শিক্ষার সুযোগের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর।
আর অপর দিকে সাক্ষরতা মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। দারিদ্র্য হ্রাস, শিশু মৃত্যু রোধ, সুষম উন্নয়ন এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি বিকশিতকরণের ক্ষেত্রেও সাক্ষরতা প্রয়োজনীয় হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হয়। মূল কথা সবার জন্য শিক্ষা। এ স্লোগান বাস্তবায়ন করতে সাক্ষরতাকে ভিত্তি হিসেবে মনে করার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একটি মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা মানুষকে সাক্ষরতা ও দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করতে সহায়তা করে।
ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ১৪ তম অধিবেশনে ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইউনেস্কো কর্তৃক ৮ই সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করা হয়। এটি ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষকে তারা বলতে চায়, সাক্ষরতা একটি মানবীয় অধিকার এবং সর্বস্তরের শিক্ষার ভিত্তি। প্রতি বছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সে বছর সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়।
এবারও প্রতি বছরের মতো বাংলাদেশে গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। এই দিবসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কোভিড-১৯ সংকট: সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন-শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা’। এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে চায় সরকার।
এদিকে আজ সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তথ্যসুত্রে জানা যায়, সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে (বিবিএস এর সর্বশেষ তথ্য)। গত সময়ের চেয়ে এই হার বেড়েছে। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় ছিল মাত্র ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার প্রতিবছর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে বাংলাদেশ।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের (৬৪ জেলা) আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ২৫০টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লক্ষ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪২ জন নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছর মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আরও ২১ লক্ষ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান আছে।
প্রসঙ্গত, সাক্ষরতার বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। শুধু সাক্ষরতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়; বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ্য। কেননা সাক্ষরতা শান্তি স্থাপনে অবদান রাখে এবং মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে।