১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করে দেয়। সারা দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পরে প্রতিবাদে। ইয়াহিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করবেনা তা বঙ্গবন্ধু বুঝে গিয়েছিলেন। ১ তারিখেই ছাত্ররা দাবী তুলে স্বাধীনতা চাই। ২রা মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তলন করে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে ফেলে। ৩ তারিখে পল্টনের জনসভাতেও লক্ষ জনতার কন্ঠে স্বাধীনতার দাবী প্রতিধ্বনীত হয়। এই দাবী গনদাবী হয়ে উঠে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এমন সন্ধিক্ষনে স্বাধীনতা ঘোষনা দেওয়া ছিল নির্ঘাত সংঘাত। বঙ্গবন্ধু ডাক দিলেন ৭ ই মার্চ তিনি গুরত্বপুর্ন ভাষন দিবেন রেসকোর্স ময়দানে। ছাত্র জনতার দাবী ৭ তারিখেই স্বাধীনিতার ঘোষনা চাই। ইয়াহিয়াও মনে করেছে জনতার চাপে মুজিব এমন ঘোষনাই দিবেন। স্বাধীনিতার ঘোষনা দিলেই ইয়াহিয়া দেশদ্রোহিতার অপরাধে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করবে। বাঙালীর মুক্তির দাবী চিরতরে স্তব্দ করে দিবে। বিশ্ববাসীও মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষনা মেনে নিবেনা। সৈন্যরাও প্রস্তুত,নির্দেশ পেলে গুলি চালাবে সভাস্থলেই। মঞ্চে দাঁড়িয়ে উত্তেজীত জনতাকে শান্ত করলেন বঙ্গবন্ধু তার বাগ্মিতায়। ২৩ বছরের ইতিহাসের বর্ননা দিলেন কবিতার ছন্দে। ৪ টি শর্ত দিলেন ইয়াহিয়াকে। সেনাপতিরা বুঝতেই পারেনি কি বলে গেলেন মুজিব। শর্ত মানলে মুজিবের হাতে ক্ষমতা আর না মানলে স্বাধীনতাই বাঙালীর লক্ষ্য। ইয়াহিয়া -ভুট্টো ঢাকায় এসে আলোচনার নামে সৈন্য জমা করছে, আর মুজিব প্রস্তুত করছে যুদ্ধের দিনক্ষন।মুজিব চেয়েছেন ইয়াহিয়াই প্রথমে আক্রমন করুক। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। যেভাবে বক্তৃতায় বলেছেন ” আমি যদি হুকুম দেবার না’ও পারি তোমাদের যা কিছু আছে তা’ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো”। ঠিক সে ভাবেই প্রথম গুলি ছোড়ার পর পরই ডাক দিলেন ” শেষ শত্রুটিকে বিতারিত করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাও”। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এটি ছিল সুপরিকল্পিত রণকৌশল। সাড়ে সাত কোটি জনতাকে বিবেধ ভুলে সম্পৃক্ত করেছেন যুদ্ধে। দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাইতো ৭১ এর যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এই ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করে গেছেন মুজিব। অনেক দেশই এই যুদ্ধে বাঙালীর পক্ষে ছিলনা কিন্তু সে দেশের জনগন সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশকে।
৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষনেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আর প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। সমরবিদদের রণকৌশল হার মেনেছে মুজিবের কাছে। এই রণকৌশলে বিন্দুমাত্র ভূল হলে বাঙালীর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যেত। তাই ৭ই মার্চের বক্তৃতা ছিল হাজার বছরে বাঙালীর গৌরব। বক্তৃতার প্রতিটি শব্দ ছিল ছন্দময় আর অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত প্রজ্জলিত। বঙ্গবন্ধু অবিস্মরনীয় দিগন্ত উম্মোচন করে প্রমান করেছেন তিনি বিশ্ব নেতা। এখন অনেকেই স্বাধীনতার ইতিহাস লেখার চেষ্টা করেন কিন্তু ৭ই মার্চের ভাষন ছাড়া স্বাধীনতার ইতিহাস অপুর্ন। স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে হলে ৭ই মার্চের ভাষনের তৎপর্যটি বুঝতে হবে আগে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, বিশিষ্ট সমাজসেবক, কলামিস্ট, টরন্টো, কানাডা।