দিনটি এখন একটি অনুষ্ঠান মাত্র। কিন্তু ৭১ সালের এই দিনটিই ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপুর্ন। এই দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ দিয়েছিলেন সরোওয়ার্দী উদ্যানে (তখন রমনা রেসকোর্স)। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলে দিয়েছিলেন। কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণাটিও দিয়েছিলেন। এই ৭ই মার্চই ছিল পাকিস্তানি শাসকদের শেষ দিন। এই দিনের পর বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানি শাসন চলেনি। এই ভাষণ এখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে।
আমরা তখন যাত্রাবাড়িতে থাকি। নারায়নগঞ্জ, ডেমরা এবং চিটাগাং যাওয়ার তখন একটাই মাত্র রাস্তা ছিল যাত্রাবাড়ির উপর দিয়ে। সকাল থেকে রাস্তায় কোন যান চলাচল করেনি। মানুষের মিছিল ছিল সর্বত্র। আদমজী বাওয়ানী থেকে আসা মিছিলে আমরা পানি সরবরাহ করেছি। কথা ছিল রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করা হবে। যে কারনে সেদিন অনেকেই মাঠে না গিয়ে রেডিও নিয়ে বসেছিল দল বেঁধে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে প্রচার হবে এটাও একটি ভিন্ন রকম আগ্রহ ছিল। গুজব ছড়িয়েছিল সভাস্থলে প্লেন থেকে বোমা ফেলা হবে। তাই অনেকে ভয়েও যায়নি মাঠে। না হয় রমনায় উপস্থিতি সংকুলান হতনা। বড়রা আমাদেরকে বাঁধা দিয়েছে মিটিং এ যেতে। আমরা কয়েকজন লুকিয়ে চলে গেছি মাঠে। ৩ টার আগেই গেছি কিন্তু কোথাও দাঁড়াবার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। যেখানেই দাঁড়াই সেখান থেকে মঞ্চ দেখা যায়না। অনেক ঘুড়ে সরোওয়ার্দী এবং শের এ বাংলার মাজারের কাছে একটি গাছে চড়ে বসেছি। দূরে হলেও একেবারে মঞ্চের মুখোমুখি।
তারপর যা দেখেছি/ শুনেছি তা অবিশ্বাস্য। এখন যে রেকর্ডকৃত বক্তৃতাটি শুনি সেদিন আরও কিছু কথা ছিল। সেগুলি কাটছাট করা হয়েছে। ফিরতি পথে এক আনা দিয়ে একটি টেলিগ্রামও কিনে এনেছি (তখন বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা হলেই ইত্তেফাক এক পাতার একটি পত্রিকা বের করত, সবাই কিনত)। মিটিং শেষে মিছিলের সাথে ফিরে গেছি যাত্রাবাড়ি। পরদিন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ রেডিওতে প্রচার হয়েছে। সেদিন যাদের সাথে রেসকোর্স ময়দানে গিয়েছিলাম তাদের সবাই এখন আর বেঁচে নেই। দু’জন মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে। এদেরই একজন ছিলেন ফারুক ভাই। ফারুক ভাই সরোওয়ার্দী কলেজের (তখন কায়েদ ই আজম কলেজ) বি এ ক্লাশের ছাত্র ছিলেন। তার নামেই এখন শহীদ আল ফারুক সড়কটি নামকরণ করা হয়েছে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, বিশিষ্ট সমাজসেবক, কলামিস্ট, টরন্টো, কানাডা।