জোবায়ের আহমেদ, শেরপুর, বগুড়া প্রতিনিধি: সম্রাট আকবরের সময়ে তৈরি করা প্রাচীন নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ। যা আজও টিকে আছে তার নিজ পরিচয়ে। পরিণত হয়েছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে।
খেরুয়া মসজিদ। যার অবস্থান বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিনে শেরপুর উপজেলার খন্দকার তলা এলাকায়। ৪৪০ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে আছে প্রাচীন এই মসজিদটি।
চুন সুরকি দিয়ে তৈরি এই মসজিদটি দুই ধার ধনুকের মতো বাঁকানো। মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে তার চার কোণে চারটি বিশাল আকার টাওয়ার এবং প্রশস্ত দেয়ালের উপর ভর করে। বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং শাহজাদপুরে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদের সাথে এর হুবহু মিল পাওয়া যায়। মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল এর সামনের দিকের দেয়ালে কষ্টিপাথরের খোদাই করা শিলালিপি। যাতে নক্তা বিহীন ফারসি ভাষায় মসজিদটি তৈরির ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে বলে জানা যায়।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি ও পূর্ব পাশে তিনটি সহ মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। জানালা বিহীন এই মসজিদের ভেতরে রয়েছে তিনটি মেহরাব। যার ওপরের অংশে অসাধারণ কারুকাজ ফুল এবং লতাপাতার নকশা করা। ভিতরে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দেয়ালে দু’টি করে মোট চারটি প্রদীপ রাখার জায়গা রয়েছে।
মসজিদটির নিচের অংশে ভূমি পরিকল্পনায় মোগল স্থাপত্য রীতি ও উপরের অংশে মোগল পূর্ব স্থাপত্য রীতি পরিলক্ষিত হয়।
মসজিদটির ছাদে রয়েছে ৩.৭১ মিটার ব্যাসার্ধের তিনটি অর্ধ গোলাকৃতি গম্বুজ। মসজিদটির সামনের দিকে দেয়ালের পুরো অংশটাতেই অসাধারণ কারুকার্য এবং বিভিন্ন ধরনের নকশা রয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে ফুল লতাপাতা এবং চারকোনা বিভিন্ন ধরনের নকশা। দৈর্ঘ্যে ১৭.৭১ মিটার এবং প্রস্থে ৭.৪২ মিটারের এই মসজিদটির দেয়াল’-এর প্রশস্ততা ১.৮১ মিটার। যা সহজেই দর্শনার্থীদের মন জয় করে।
মসজিদের পূর্ব পাশ ব্যতীত তিনপাশে দেয়ালের উপরের দিকে দেয়াল খোদাই করে ছোট ছোট কুঠুরি বা পাখির থাকার জায়গা করা হয়েছে। পূর্বে সেখানে কবুতর বাস করলেও বর্তমানে শালিক, টিয়া, হুতুমপেঁচা সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সেখানে বাসা বেধেছে।
অসাধারণ এই মসজিদটির নামকরণ এখনো অজানা। দেয়ালের শিলালিপির বাংলা অনুবাদ থেকে জানা যায় যে জোওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল এটি ১৫৮২ সালে নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক মসজিদটি সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে দেওয়ায় এর সৌন্দর্য আরও বর্ধিত হয়েছে। বর্তমানে এখানে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছেন প্রাচীন এই মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
১৯৮৮ সাল থেকে দেখাশোনা করে আসা মসজিদের খাদেম আব্দুস সামাদ প্রামানিক বলেন প্রতিদিন শত শত মানুষ এই প্রাচীন নিদর্শন টি দেখার জন্য আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। তবে ছুটির দিনগুলোতে এখানে মানুষ সবচেয়ে বেশি হয়। এদিন মুখরিত থাকে পুরো এলাকা।
পর্যটকদের দাবি এমন প্রাচিন মসজিদ বিলুপ্তির পথে প্রায়। তাই এটা সংরক্ষণের ব্যপারে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকার আহ্বান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে।