ডিবিএন ডেস্কঃ আজ ২৩ জুন দেশের প্রাচীনতম, ইতিহাস – ঐতিহ্যে আদর্শিক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করা দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৩ তম জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রথম আবির্ভাব ঘটে জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এ দলটির । ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালে সর্বজনীন দল হিসেবে রুপলাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং তখন মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়।
১৯৪৯ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে দলটি এবং তিনিই হন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক এবং শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পরে ১৯৫৩ সালে দলটির সাধারণ সম্পাদক হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক খোলসমুক্ত হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এ দলের নির্বাচনী প্রতীক হয় নৌকা।
তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের প্রাণপ্রিয় নেতা এবং বিশ্বের এক নম্বর জননন্দিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছর অর্থাৎ ১৩১৪ দিনের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী কুচক্রী মহলের নিষ্ঠুরতায় সপরিবারে নিহত হন তিনি। রক্তাক্ত হয় বাংলাদেশের রাজনীতি, অস্তিত্ব বিলীন হয় গণতন্ত্রের, আধাঁরে ঢেকে যায় মানুষের চাওয়া-পাওয়া। এরপর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে এক রকম পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল আওয়ামী লীগ।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরাও আবারও প্রাণ ফিরে পান, উজ্জীবিত হয় এবং নবউদ্যামে সংগঠিত হয়। আওয়ামীলীগের ইস্পাত কঠিন আন্দোলন শুরু হয়, চলতে থাকে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে দলটি। তারপর ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিযোগিতার পরেও হেরে গিয়ে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। অবশেষে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আজকের আওয়ামীলীগ। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করে দলটি। তখন থেকে টানা তিন মেয়াদে সরকারে রয়েছে আওয়ামী লীগ। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ১৯৫৪ সালে (যুক্তফ্রন্ট), ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার হিসেবে, ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে এবং ২০১৯ এর জানুয়ারীতে এ টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কর্মসুচীঃ দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এবারও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- এদিন সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন। একই দিন সকাল ৮টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনা সভা। সভায় গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ ছাড়াও এদিন টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি পালনে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সব স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে বুধবার বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শুভ জন্মদিন ঐতিহাসিক ২৩ জুন অঙ্কুরিত হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নসূত্র’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন একটি মহতী ক্ষণে উদযাপিত হচ্ছে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার অনন্য প্রতীক পদ্মাসেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ জুন সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবেন।