আজ ২১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিশ্ব টেলিভিশন দিবস। ১৯২৬ সালের এই দিনে টেলিভিশন উদ্ভাবন করেন জন লোগি বেয়ার্ড। তাঁর এই উদ্ভাবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই টেলিভিশন উদ্ভাবনের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ সারা বিশ্বে টেলিভিশন দিবস পালন করা হচ্ছে।
টেলিভিশনের নাম ও উৎপত্তিঃ টেলিভিশন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘টেলি’ অর্থ দূরত্ব আর লাতিন শব্দ ‘ভিশন’ অর্থ দেখা। এই দুটি শব্দ মিলে টেলিভিশনের অর্থ দাঁড়ায় ‘দূরদর্শন’। টেলিভিশনে একই সঙ্গে ছবি দেখা ও শব্দ শোনা যায়।
টেলিভিশন কিভাবে কাজ করেঃ টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত ৩টি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয় টেলিভিশনের আউটপুট। টিভি ক্যামেরা; যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার; যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট (রিসিভার), যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করা। সাধারণত ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়- স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের জন্য মুভি বা ভিডিও ক্যামেরার ব্যবহার হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র। ভিডিও ক্যামেরা দ্রুত গতিতে পরপর অনেকগুলো স্থিরচিত্র গ্রহণ করে। এই ছবিগুলোকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলো চলচ্চিত্র বলে মনে করে। ফ্রেমে এই দ্রুতগতিতে ছবি পরিবর্তনের কারগরি কৌশলটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।
প্রথম সম্প্রচার থেকে বাণিজ্যিক টেলিভিশনের যাত্রাঃ টেলিভিশন আবিষ্কারের পর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবার্গের সহায়তায় ১৯৩৬ সালে বিবিসি প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে। আর ১৯৪০ সালে শুরু হয় বাণিজ্যিক টেলিভিশনের যুগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশন প্রযুক্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, যা ৫০-এর দশকে গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের ভূমিকা আরও সুদৃঢ় করে।
বাংলাদেশে টেলিভিশনের ইতিহাসঃ বাংলাদেশে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সাদা-কালো সম্প্রচারের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৮০ সালে রঙিন সম্প্রচার চালু করে। বর্তমানে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ টিভি সরকারি চ্যানেল হিসেবে কার্যকর। পাশাপাশি দেশে ৪৪টি বেসরকারি চ্যানেলের অনুমোদন রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫টি বর্তমানে সম্প্রচারে সক্রিয়।
টেলিভিশনের গুরুত্ব, প্রভাব ও ভবিষ্যৎঃ টেলিভিশন মানুষের দৈনন্দিন খবর সংগ্রহ এবং জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। যদিও কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাবের ফলে বিনোদন ও সংবাদ পরিবেশনের ধরন অনেকটাই বদলেছে, তবুও টেলিভিশন এখনও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রধান মাধ্যম হিসেবে টিকে আছে। এসব অঞ্চলে, যেখানে মোবাইল ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই ফিচার ফোন ব্যবহার করেন, সেখানে টেলিভিশনই বিনোদনের মূল উৎস। এটি একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম, যা আমাদের শিক্ষা, তথ্য ও বিনোদন সরবরাহের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। প্রযুক্তির বিবর্তন সত্ত্বেও টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব কমেনি। এটি আজও মানুষকে সংযুক্ত করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এবং বিশ্বব্যাপী সমাজের চিন্তা-চেতনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব টেলিভিশন দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে টেলিভিশন শুধু একটি বিনোদন মাধ্যম নয়, এটি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগের এক অনন্য উৎস।
আজ ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:২০ | শনিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি