আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ধরে চাপা পড়ে ছিল শরণার্থী সমস্যার ইস্যু। লকডাউন আর কঠোর বিধিনিষেধে গত বছর বিভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও ২০২১ সালে তা আবার বেড়েছে। চলতি বছর বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আশ্রয়প্রার্থী বের হওয়া দেশের নাম হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
এ বছর শরণার্থী সংকটে সবচেয়ে বড় অবদান তিউনিসিয়ার। ২০২১ সালে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের প্রায় ২৫ শতাংশই উত্তর-আফ্রিকার দরিদ্র দেশটি থেকে যাওয়া। এর পরই সবচেয়ে বেশিবার নাম এসেছে বাংলাদেশের। এ বছর ১১ শতাংশের বেশি শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে রওনা দিয়েছিল। ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত ইউরোপ অভিমুখে রওনা দেওয়া অন্তত ৬ হাজার ৪৫৫ জন শরণার্থীর যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। তাদের মধ্যে অজ্ঞাতসংখ্যক লোক মারা গেছেন। শরণার্থী উৎস দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আসার অন্যতম প্রধান কারণ ধরা হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটকে। সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমার সরকারের চরম দমন-পীড়নের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
আরব নিউজের খবরানুসারে, ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত ইউরোপ অভিমুখে রওয়ানা দেয়া অন্তত ৬ হাজার ৪৫৫ জন শরণার্থীর যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। এদের মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক লোক মারা গেছেন।
গত মে মাসে তিউনিসিয়া উপকূলে ৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। একটি তেল প্ল্যাটফর্ম আঁকড়ে ধরে তখন কোনোমতে প্রাণে বাঁচেন ৩৩ জন। পরে উদ্ধারকারীরা খুবই অবাক হন, যখন জানতে পারেন, বেঁচে যাওয়া সবাই বাংলাদেশ থেকে গেছেন। তবে ওই লোকগুলো আসলেই বাংলাদেশি নাগরিক কিনা তা পরিষ্কার নয়।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত আনুমানিক ১ লাখ ৯ হাজার ৭২৬ শরণার্থী ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছেন। একই সময়ে পূর্ব আটলান্টিক বা কুখ্যাত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৫৪৩ জন। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৪২২ শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে ইতালি বা মাল্টা যাওয়ার পথে। এর বাইরে আরও ৯৫৯ জন মারা গেছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে স্প্যানিশ ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের মধ্যকার বিপজ্জনক রুট পাড়ি দিতে গিয়ে।
শরণার্থীদের পুনর্বাসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে এইএনএইচসিআর। তারা জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে ২ কোটি ৭ লাখ শরণার্থীর মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার জনের পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে।