বিগত কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে। ২০২৩ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়েছে।
অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চায়ের উৎপাদন হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩ সালে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে স্থানীয় বাজারে চাহিদা অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এমন রেকর্ড উৎপাদনেও রপ্তানি খুব একটা বাড়বে না।
চা বোর্ড সূত্র জানায়, দেশে ১৬৮টি চা বাগান রয়েছে। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। সে হিসাবে প্রায় ১৭০ বছর ধরে দেশে চা উৎপাদন হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে।
২০২৩ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়েছে।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট ভ্যালির সভাপতি জিএম শিবলী বলেন, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, পুরনো গাছ সরিয়ে নতুন চারা রোপণ এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড, তবে রপ্তানি বাড়বে না।
তিনি বলেন, আগে অনেকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে চা বাগান কিনতেন। কিন্তু তারা উৎপাদনে মনোযোগী ছিলেন না। সেদিন আর নেই। বিশেষত বড় করপোরেট হাউসগুলো চা বাগানে বিনিয়োগ করার পর থেকেই উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া এবার পরিমাণমতো বৃষ্টিপাত হওয়ায়ও উৎপাদন বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে ২০২১ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০২২ সালে ১০ কোটি কেজি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি।
দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। মৌলভীবাজারের বড়লেখার একটি চা বাগানের ব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার সেবুল বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা চা চাষের আওতা বাড়াচ্ছি। পতিত জমিতে নতুন চারা রোপণ করা হচ্ছে। এর ফলও মিলছে। প্রতিবছরই উৎপাদন বাড়ছে।’
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চায়ের উৎপাদন বাড়াতে সমতলে চা চাষে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে চারা ও মেশিনারিজ বিতরণ করা হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চল এবং সমতলেও চা চাষের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া বাগানগুলোর আয়তন আড়াই শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। এসব উদ্যোগের ইতিবাচক ফল মিলছে।
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম এনডিসি বলেন, ‘বাগান মালিক, শ্রমিক, চা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে। বাগানগুলোতে পুরনো গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগানোর দিকে নজর দেয়া হয়েছে। এতেও সুফল মিলেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে চায়ের উৎপাদন খরচও অনেকাংশে বেড়েছে। কিন্তু নিলামে অনেক সময় ভালো দাম পাওয়া যায় না। যারা প্যাকেটজাত করেন তারা বাজারে অনেক দামে চা বিক্রি করেন। কিন্তু বাগান মালিকরা তেমন দাম পান না। এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই চায়ের দামের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
আজ ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:১৩ | রবিবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি