চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রফতানি আয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার। যা রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, একক মাস হিসেবে সর্বশেষ এপ্রিল মাসে রফতানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে তিন হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল তিন হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে, এপ্রিল মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত বছর এপ্রিলে আয়ের পরিমাণ ছিল ২৯৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের আয় ধারাবাহিকভাবে ভাল হওয়ায় রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি ড. আব্দুল হান্নান বাসসকে বলেন,বাংলাদেশের রফতানি খাত মূলত পোশাক নির্ভর। রফতানিতে পোশাক খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছে। এর পাশাপাশি গত কয়েকবছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় রফতানি আয়ে উল্লেখ করার মত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে। তিনি রফতানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পোশাকের পাশাপাশি পণ্য বহুমূখীকরণ বিশেষ করে বেশি মূল্য সংযোজন হয় এমন পণ্য রফতানির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বাসসকে বলেন,রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে পোশাক খাত দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য পরিসেবা শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে রফতানি আয় আরো বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য রফতানি বাড়াতে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা ও প্রনোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন।
ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রথম দশ মাসে দুই হাজার ৬৭৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয়েছে দুই হাজার ৮৪৯ কোটি ৭ লাখ ডলারের পণ্য।যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।
পোশাক খাতের নিট পণ্য (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় দুই-ই বেড়েছে।এক হাজার ৩২১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় দাঁড়িযেছে এক হাজার ৪০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতবছরের একইসময়ে এই খাতে রফতানি ছিল এক হাজার ২৫৪ কোটি ২ লাখ ডলার।
আলোচ্য সময়ে ওভেন পণ্যেও (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এক হাজার ৩৫৩ কোটি ১৮ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে এক হাজার ৪৪০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের। গতবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
জুলাই-এপ্রিল সময়ে বড় পণ্যসমূহের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে।এই খাতে রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৩ লাখ ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ।মাছ রফতানি হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এর প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ সময়ে কৃষিজাত পণ্যের রফতানি দাঁড়িয়েছে ৭৯ কোটি ৯ ডলার,এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রফতানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। বিগত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রফতানি ছিল ৯১ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের,এবারের একই সময়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় কমেছে। পাশাপাশি আসবাবপত্র,হস্তশিল্প, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য, সিরামিক পণ্য,রাসায়নিক পণ্য রফতানি বেড়েছে।