২০ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে দুর্দান্ত এক দল নিয়ে কাতারে পা রাখে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেও তৃতীয় ম্যাচে এসে ক্যামেরুনের কাছে পরাজিত হয়। কিন্তু শেষ ষোলোর ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে শিরোপার আশা আরও জাগিয়ে দেয়।
কিন্তু প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে এসে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়। এতে স্বপ্নভঙ্গ হয় নেইমার, রিচার্লিসনদের।
কাতারের আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম হয়তো এই দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। নেইমার, থিয়াগো সিলভা, রিচার্লিসনদের চোখের পানিতে স্টেডিয়ামটির সবুজ গালিচা ভাসবে। কিন্তু, বাস্তবতাকে কারো এড়ানোর সাহস নেই। অতিরিক্ত মিনিটের গোলে ম্যাচে ফিরলেও আবার সেই অতিরিক্ত মিনিটের আরেক গোলে ম্যাচে ফিরে ক্রোয়েশিয়া। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গিয়ে দাঁড়াতে হয় টাইব্রেকার নামক ভাগ্যের খেলায়।
সেখানে শেষ পর্যন্ত হারতে হয় ব্রাজিলকে। মার্কুইনহোসের যখন পেনাল্টি নিতে আসেন তার আগেই ক্যামেরার চোখ ঘুরে যায় নেইমারের ওপর। তখনই বোঝা যাচ্ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা এই তারকার মনে হয়তো জানা হয়ে গেছে, তারা বিদায় নিচ্ছেন। চোখ ছলছল করছিলো তখনই। মার্কুইনহোস শটটি সাইডবারে লাগাতেই অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে বসে পড়েন নেইমার।
তখনই তার চোখ বেয়ে অজোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। দানি আলভেজসহ সাইড বেঞ্চে বসা ফুটবলার এবং কর্মকর্তারা এসে নেইমারকে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু উথলে ওঠা আবেগের কান্না কী রোদ করা সম্ভব? চোখের পানিকেও বা কী জবাব দিয়ে আটকে রাখবেন তিনি!
অনেকগুলো সুযোগ তারা তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই সুযোগগুলো মিস করেছে তারা। কখনও নিজেদের ভুলে মিস হয়েছে, কখনও ক্রোয়েশিয়ান গোলকিপারের নৈপুন্যে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কোন দল গোল করতে না পারলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পূর্বে দুর্দান্ত এক গোল করেন নেইমার। ক্রোয়েশিয়ান গোলকিপারকে ড্রিবলিং করে বল পাঠান ক্রোয়েশিয়ার জালে।
মনে হচ্ছিল এই ম্যাচে বুঝি ব্রাজিল জিততে চলছে। কিন্তু ১১৭ মিনিটে গোল করে খেলায় সমতা ফেরান পেতকোভিচ। তার শট মার্কুইনহোসের পায়ে লেগে অ্যালিসনের নাগালের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
তখন আবার ক্রোয়েশিয়ার অতিরিক্ত সময়ের ভাগ্যের কথাই যেন বার বার উঠে আসছিল। কেননা, ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে কখনওই অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া হারেনি। ম্যাচে আর কোন দল গোল করতে না পারলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
সেখানে চার শটেই গোল করে ক্রোয়েশিয়া। বিপরীতে রোদ্রিগোর প্রথম শট সেভ করেন ক্রোয়েশিয়ান গোলকিপার। আর মার্কুইনহোসের চতুর্থ শট আটকে যায় বারপোস্টে। ফলে ৪-২ গোলে পরাজিত হয় ব্রাজিল।
ব্রাজিলের এই টাইব্রেকারে শটগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন নেইমার। তিনি হয়তো শেষ শটটি নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেইমারকে বিদায় দেখতে হয় দলের।