তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বন্যা কবলিত হয়েছেন দুই ইউনিয়নের সাতটি গ্ৰাম ও প্রায় হাজারো মানুষ। টানা তিনদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামার কারণে হাকালুকি হাওর পানিতে ভরে ফেঁপে উঠেছে। তীরবর্তী জনপদের বসতবাড়িগুলো এখন আকস্মিক বন্যা কবলিত। ইতিমধ্যে কয়েটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে পাঠদান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাওরের পানি বেড়ে গিয়ে দুই ইউনিয়নের শাহপুর, দিগলবাগ, বেলাগাও, জাঙ্গিরাইসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে পাহাড় ও টিলা বসতি এলাকায় কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসে গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে জুড়ী লাঠিটিলা সড়কে যান চলাচল।
জুড়ী উপজেলা প্রশাসন জানায়, জুড়ী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টির সাথে উজানের পানির ঢলের জন্য উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। অতিরিক্ত বর্ষণের জন্য গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম গোয়ালবাড়ি পাহাড়ধস হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যার্ত অসহায় মানুষদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, পাহাড়ধস, পানিবন্দি লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা এবং জরুরী সেবা প্রদানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানার নেতৃত্বে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
স্কুল শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন জানান, আজ আমার নিজ কর্মস্থল হরিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে ডুবে যায়। বিদ্যালয়ের অফিসে পানি ঢুকে গেছে এবং আঙিনায় ও থৈ থৈ করছে পানিতে।
মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইশাক আলী জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে।
ভোগতেরা গ্রামের সিদ্দিক জানান, আমাদের গ্রামে অনেক মানুষ গৃহবন্দী হয়ে আছেন। অনেক মানুষ নিজ বসত বাড়ি রেখে চলে ও যাচ্ছেন।
বাছিরপুর গ্রামের মাহবুব আলম জলিল জানান, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদী খালবিল ভরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বাছিরপুর এলকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ীর রাস্তার উপর পানি উঠে পড়েছে। বেশকিছু ঘরের দরজার সামনে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। অনেকেই আবার মাটির ঘরের ভেতর বাঁশের মাচা দিয়ে পরিবারের শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।
জুড়ী উপজেলার পশ্চিম গোয়ালবাড়ী এলাকার কামরান জানান, টানা ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পশ্চিম গোয়ালবাড়ী এলাকাতে পাহাড় ধসে পরে। এতে মো. মনতুজ মিয়ার ঘর ভেঙে দুটি গরু এবং ৫টি ছাগলসহ ২০টি হাঁস মুরগী মাটি চাপায় মারা যায়। ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ থেকে ৫টি পরিবার। এখন পাহাড় ধসার কারণে প্রায় ২০টি পরিবার আতঙ্কে আছে।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, জুড়ী উপজেলায় হাওরপাড়ের পাঁচটি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এই ভোগান্তিতে পড়েছেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নেয়ার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলার হাওড় অঞ্চলে দিনকে দিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কর্তৃপক্ষ (১৮ জুন) শনিবার থেকে দুটি বৈদ্যুতিক ফিডার অনির্দিষ্টকালর জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ফিডার দুটি হল কুলাউড়া উপজেলার ইসলামগঞ্জ এবং জুড়ীর নার্সারি ফিডার। ফিডার দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুলাউড়ার ভুকশিমইল, কাদিপুর, শশারকান্দি, ইসলামগঞ্জ ও জুড়ী উপজেলা জায়ফর নগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোকজন বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন।
কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গনি জানান, কুলাউড়ায় প্রতিদিন পানি বৃদ্ধির কারণে হাওর এলাকার দুটি বিদ্যুতের ফিডার শনিবার (১৮ জুন) থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি না কমা পর্যন্ত ওই দুটি ফিডার বন্ধ থাকবে। কুলাউড়ায় অবস্থিত বিদ্যুতের গ্রীড অফিসের আশপাশের পানি উঠে পড়েছে। গ্রীডের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্থানীয় (কাপুয়া) নদীটি পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় গ্রীডে পানি ঢুকার সম্ভাবনা ও রয়েছে বলে তিনি জানান।