বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনাতে জন্ম সুচিত্রা সেনের, তার আসল নাম রমা দাশগুপ্ত।
তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। তার আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী।
১৯৫২ সালে চলচ্চিত্র জগতে প্রথম পা রাখেন সুচিত্রা সেন। তার প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’সাড়া ফেলে দেয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে। উত্তম কুমারের সাথে তার জুটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কালজয়ী জুটি হিসেবে মানা হয়। ১৭ টি সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করছেন তারা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : পথে হল দেরী, সাড়ে চুয়াত্তর, এন্টনী ফিরিঙ্গি, দেয়া নেয়া ইত্যাদি।
সুচিত্রা সেন বাংলার ছবির পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেও সাফল্য পেয়েছেন। তার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি ‘দেবদাস’ (১৯৫৫), এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন খ্যাতনামা বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমার।
সুচিত্রা সেনই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। ১৯৫৫ সালে প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাসের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন। ‘আন্ধি’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পান। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলাবিভূষণ সম্মাননা দেওয়া হয় তাঁকে।
সুচিত্রা সেন ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবি করার পর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। ২০০৫ সালে সুচিত্রা সেনকে ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে সুচিত্রা সেন দিল্লিতে গিয়ে ওই সম্মান গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পর্দার অভিনয়জীবনে নিজের যে চূড়ান্ত রোমান্টিক রূপটি গড়েছিলেন, স্বেচ্ছা-অন্তরালে সেই রূপটিই ধরে রেখেছিলেন শেষ জীবনেও। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেই বিদায় নিয়েছেন তিনি কিন্তু আমরা তাকে সেই মহানায়িকার জায়গাতেই রেখে দিবো চিরকাল।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম