কোভিড-১৯ বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। সমগ্র পৃথিবী করোনার সংক্রমন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিপদটি হলো কোন প্রতিশেধক নেই, বাচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হল অক্সিজেন দেওয়া তারও অপ্রতুল্লতা সব খানে সবদেশে। এমেরিকাতেও করোনায় আক্রান্ত রুগী ভেন্টিলেশনের সুযোগ পাচ্ছেনা। এখানেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভিযোগে ট্রাম প্রশাসন নাস্তানাবুদ। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ অনুযোগের অন্ত নেই। দেশে কোভিড সংক্রমনের পর থেকেই স্বাস্থ্যদপ্তর এবং মন্ত্রনালয়ের অব্যবস্থাপনার অভিযগ উঠেছে প্রতিদিন। লেখালেখি, আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে। বাজেটেও কোভিড-১৯ মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে অর্থ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর পদত্যগ সহ নানা রকম দাবী উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে। অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় অভিযোগটি প্রচার হয়েছে। ২০০ ডাক্তারের এক মাসের খাওয়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২০ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তদন্ত শেষ না করে অর্থ প্রদান স্থগিত ঘোষনা করেছেন। বিষয়টি গনমাধ্যমে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা গলা ফাটিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। অবশেষে টেলিভিশনের সংবাদ কর্মীরা বিষয়টিকে জাতীর সামনে তুলে ধরার জন্য সাংবাদিক, সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় বসান। আলোচনায় বেড়িয়ে আসে ঘটনা সত্য নয়। বরাদ্ধকৃত অর্থ এখনো অধিদপ্তরের পৌছায়নি। বেড়িয়ে এসেছে ডাক্তার, নার্স আর সেবাকর্মীদের কষ্ট আর দুরাবস্থার কথাও। এই টাকার অংকটি সঠিকভাবে এবং তার ব্যখ্যা দেওয়ার জন্য গতকাল একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তিপক্ষ। প্রকৃত সত্য উদঘাটনের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে কে এবং কারা এমন অসত্য সংবাদ ছড়িয়ে দেশবাসিকে উত্তেজিত করল এবং কেন?
এই খানটাই রাজনীতি। বেশ কিছুদিন ধরেই আমি অনবরত লিখে যাচ্ছি, একটা ষড়যন্ত্র চলছে। বর্তমান সরকারের সাফল্যকে ব্যর্থ করতে অসত্য প্রচারের রাজনীতি চলছে। পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার আগেই দুর্নীতির বদনাম ছড়িয়ে বিশ্বব্যংকের অর্থ ফিরিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযোগেকে চ্যলেঞ্জ করেছেন। অবশেষে কানাডার আদালতে সেই দুর্নীতি অসত্য প্রমানিত হয়েছে। এই মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের বিরোধী দলের নেতাদের বক্তৃতা বিবৃতি ভুলার নয়। নেতাদের অসত্য অনুযোগ দেশের মানূষের বিশ্বাস ভংগ হয়েছে রাজনীতির উপর। এই গুয়েবেলস চক্রটি শক্তিশালি এবং নিরলস ব্যাস্ত রয়েছে দেশের ধংস নিশ্চিত করার জন্যে। এই চক্র অচেনা নয় কারো। সরকারের বিরুদ্ধে গুয়েবেলসের অর্থ যোগান দিচ্ছে, প্রচারনা চালাচ্ছে সতীর্থরা। সংবাদ পাঠের মত মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে বিষ ছড়াচ্ছে জনমনে। সময়টি ভালনা। এই মুহুর্তে দুর্যোগ মোকাবেলাই একমাত্র করনীয়। সচেতন নাগরিক হিসাবে সকলেরই উচিত সত্য যাচাই করা। মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, সকলের। দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, জনগনও তাদের চিনে। জাতীর দুঃসময়ে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যারা দেশকে অস্থিতিশিল করতে চায় তারা গুয়েবেলসের অনুসারি। করোনা – ১৯ বিশ্বব্যাপি মহামারি হয়ে এসেছে, মানব জাতীকে রক্ষা করতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মেনে চলাই একমাত্র উপায়। মহামারির দুর্যোগে যারা রাজনীতির অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার করে তারা, মানব সভ্যতার অভিশাপ।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২ জুলাই ২০২০।