করোনার আক্রমন হয়েছে ছয় মাস হয়ে গেল। ইতিমধ্যে তিন হাজার মানূষ মৃত্যু বরন করেছে দেশে। আরও কত মানূষের জীবন যাবে জানেনা কেউ তবে, এই মহামারি একটা উপকার করেছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের চিত্রটি উম্মোচিত করে দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচুনিচু সকল পর্যায়ে দুর্নীতি চলে। দুর্নীতি করেই অর্থবিত্ত্বের মালিক হয়েছে অনেকে। মন্ত্রী হিসাবে ব্যর্থতার দায়টি তার উপরই। দায় স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যগ বা অপসারনও হতে পারে শীঘ্রই। অনিয়ম আর দুর্নীতি ধরা খেলে দ্বায়টি রাজনীতির উপর চাপিয়ে দুর্নীতিবাজরা নিরাপদেই থেকে যায়, দুর্নীতিটি বন্ধ হয়না। যখন দুর্নীতির খবর বের হয় তখন গনমাধ্যমের কর্মীরাও মন্ত্রীর পিছনে লেগে যায়। বের করতে চেষ্টা করে রাজনীতির ব্যর্থতাটি। আইনের লোকেরা ধৃত ব্যক্তিটির রিমান্ড চায় বার বার। আসল চক্রটি কাজ চালিয়ে যায় অবাধে। মতামতের চাপে দু’একজন এদিক ওদিক ট্রান্সফার হয়, বাকিরা স্ব স্ব অবস্থানেই থেকে যায়। দুর্নীতিদমন কমিশন আর পুলিশ সরকারি কর্মাচারীদের আয়ের উৎসটি খোঁজ করলেইত সব সত্য বের করে আনা সম্ভব। পিয়ন দাড়োয়ানও বাড়ী গাড়ীর মালীক হয় কিভাবে? কেউ একবার বদলির আবেদন করলেই জেনে যাবে স্বাস্থ্য দপ্তরে কি ঘটে! দপ্তরে ঠিকাদারদের খোজ নিলেও অনেক তথ্য বেড়িয়ে আসবে। কারা কত দামে কি জিনিষ সাপ্লাই করেছে সেই চিত্রটি বের হলেই সব সত্য বেড়িয়ে পরবে। নিদৃষ্ট অংকের নীচে হলে কোন ফাইল মন্ত্রীর টেবিলে পৌঁছেনা, সচিবরাই অনুমোদন দেয়। মন্ত্রীকে বাগে আনতে না পারলে প্রোজেক্টটি ভেংগে দুইভাগ করে ফেলে (যা সচিবের আওতায় থাকে) এবং, সচিবরাই অনুমোদন দিয়ে দেয়। কোন সচিবের বিরুদ্ধে কি কখনো কোন তদন্ত হয়েছে? সচিবদের তদন্ত করতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। কিন্তু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগেনা। এই নিয়ম কারা বানিয়েছে, দুর্নীতিত দুর্নীতিই! অনিয়মের তদন্ত সবার জন্যই হওয়ার কথা, সচিবদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে অনুমতি লাগবে কেন? এটাই বাংলাদেশের নিয়ম, এবং পরিকল্পিত অনিয়ম। এই অনিয়মের কারনেই রাজনীতি বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, দ্বায়ী হয়েছে নেতারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের ধনী মানূষদের একজন, রাজনীতিতেও তিনি কৌশলি নন। মন্ত্রনালয়ের অনিয়মের দ্বায় স্বীকার করে তার পদত্যাগ করাই তার জন্য মংগল হবে। রেলের দুর্ঘটনা হলে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের রেওয়াজ ছিল আগে, স্বাস্থ্য মন্ত্রীই সেই রেওয়জটির সাহস দেখাবেন আশাকরি। দুর্নীতির উৎসটি শেষ হওয়া এখান থেকেই শুরু হউক। রাজনীতি শুদ্ধ হউক। অপরাধের শেকড় খোঁজার উদ্যোগ এই সরকারই নিতে পারে। দুর্নীতি শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়েই হচ্ছেনা, সব মন্ত্রনালয়েই দুর্নীতির খোঁজ করা হউক।অভিজাত এলাকার বাড়ীর মালিকদের খোঁজ নিলেই কাজটি সহজ হয়ে যাবে। করোনার কারনে ঢাকায় এখন To Let দেখা যাচ্ছে সবখানে। অভিজাত এলাকার বাড়ীর মালিকদের খোঁজ করলে ফ্লাটের দামটিও কমে যাবে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
কানাডা ২৮ জুলাই ২০২০।