প্রদীপ কুমার দেবনাথ, স্টাফ রিপোর্টার ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
৬ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ‘কোটিপতি পিয়ন’ ইয়াছিন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে জেলার সদর মডেল থানার সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক ইয়াছিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের আতুয়াকান্দির মোহন মিয়ার ছেলে। তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে পলাতক ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভোরে থানার সামনে থেকে ইয়াছিনকে আটক করা হয়েছে। তার অফিসের কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অডিট চলার সময় কোটি টাকার ঘাপলা বেরিয়ে আসে। চট্টগ্রাম রেজিস্টার অফিসের বিভাগীয় পরিদর্শক মিতেন্দ্র নাথ শিকদার অডিট কার্যক্রম শুরুর পরই পালিয়ে যান পিয়ন ইয়াছিন মিয়া। এ ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদ বাদী হয়ে ৩০ নভেম্বর রাতে সদর মডেল থানায় জিডি করেন।
তিনি আরো জানান, জিডি হওয়ার পরই পুলিশ ইয়াছিন মিয়ার খোঁজে মাঠে নামে। ৪ নভেম্বর রাতে ইয়াছিনের প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগমকে থানায় ও দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা বেগমকে তার পশ্চিম পাইকপাড়ার বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ইয়াছিন মিয়ার ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনা টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একাধিক কর্মচারী বলেন, পিয়ন পদে চাকরি করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন ইয়াছিন মিয়া। জেলা শহরে রয়েছে ইয়াছিনের তিনটি বাড়ি। এছাড়াও তার নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। তার তিন স্ত্রীও রয়েছে। তার পোস্টিং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। তবে তিনি ডেপুটেশনে দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২৩ বছর আগে ইয়াছিন মিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পান। এরপর বিভিন্ন সময়ে তাকে আশুগঞ্জ ও নাসিরনগর উপজেলায় বদলি করা হলেও ঘুরেফিরে তিনি সদর উপজেলায় চাকরি করছেন।
ইয়াছিন মিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকল, তল্লালি ও রেজিস্ট্রেশন ফিসহ চালানের টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিতেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সোনালী ব্যাংকের ভুয়া চালান রশিদ তৈরি করে তিনি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ইয়াছিনের প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ইয়াছিন মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর দুই বছর পর তিনি (ইয়াছিন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে পিয়ন পদে চাকুরি পান। তিনি আরো জানান, তার স্বামী ইয়াছিন মিয়া তাকে (সাজেদা) পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামে চার শতাংশ জায়গার ওপর তিনতলার একটি বাড়ি করে দেন। সেই বাড়িতেই তিনি বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে তিনি তার বড় ছেলেকে ফ্রান্সে পাঠিয়েছেন।
সাজেদা জানান, তাকে বিয়ে করার ১০ বছর পর ইয়াছিন আকলিমা নামে এক বিধবাকে বিয়ে করেন। তার সঙ্গে এক মেয়ে ছিল। ওই মেয়ে বড় হওয়ার পর তাকে ইতালি প্রবাসী এক যুবকের কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ইয়াছিন মিয়া ওই মেয়ের স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে পৌর এলাকার পাইকপাড়ায় একটি ছয়তলা বাড়ি করেছেন।
আকলিমাকে বিয়ের পাঁচ বছর পর ইয়াছিন প্রবাসীর স্ত্রী মকসুরা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মকসুরাকেও বিয়ে করেন ইয়াছিন। পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়ার একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই তৃতীয় স্ত্রী মকসুরাকে নিয়ে বসবাস করেন ইয়াছিন। কিন্তু কোটি টাকার ঘাপলা বের হওয়ার পর তৃতীয় স্ত্রী মকসুরাকে নিয়েই গা ঢাকা দেন তিনি