সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত (২৮৫+২৮৬) “আমানার রাসুলু. . .থেকে শেষ পর্যন্ত” – তেলাওয়াত করার অনেক উপকারের কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। শেষ আয়াতে অত্যন্ত জরুরী কয়েকটি দুয়া রয়েছে। এসব দুয়া কবুল হওয়ার ওয়াদাও করা হয়েছে। এই কারণে, আমাদের এই আয়াতগুলি হৃদয় দিয়ে মুখস্থ করার জন্য এবং বন্ধু এবং পরিবার সদস্যদের সাথে এই জ্ঞানটি ভাগ করার জন্য একটি বিশেষ প্রচেষ্টা করা উচিত।
আরবীতে:
আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
আপনারা শুদ্ধ ক্বারীর উচ্চারণ এখান থেকে শুনুনঃ https://www.youtube.com/watch?v=ClkQSZGSlTg
উচ্চারণঃ ২৮৫. আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফার-রিকু বাইনা আহা’দিম-মির রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া আত্বা’না, গুফরা নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।
অর্থ : ‘রাসূল বিশ্বাস রাখেন ওই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা! তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৮৫)।
২৮৬. লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা। লাহা মা কাসাবাত ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা-তু আখজিনা-ইন্না সিনা- আও আখত্বা’না। রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা। আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন। (আমিন)।
অর্থ : ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার ওপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের ওপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ওই বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্যে কর। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
সুরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফযীলত:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমাকে আল্লাহর আরশের নীচের একটি ধন-সম্পদের ভান্ডার থেকে সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত দেওয়া হয়েছে। আমার পূর্বে তা কাউকে দেওয়া হয়নি, আমার পরেও অন্য কাউকে তা দেওয়া হবেনা।” আন-নাসায়ী, ইবনে হিব্বান, শায়খ আল-আরনাউ’ত বলেন, হাদীসটি সহীহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমাকে আল্লাহর আরশের নীচের একটি ধন-সম্পদের ভান্ডার থেকে সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত দেওয়া হয়েছে। আমার পূর্বে তা কাউকে দেওয়া হয়নি, আমার পরেও অন্য কাউকে তা দেওয়া হবেনা।” আন-নাসায়ী, ইবনে হিব্বান, শায়খ আল-আরনাউ’ত বলেন, হাদীসটি সহীহ।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আকাশ ও জমীন সৃষ্টি করার দুই হাজার বছর পূর্বে একটা কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব থেকে সুরা বাক্বারার শেষ দুইটি আয়াত নাযিল করা হয়েছে। এই দুইটি আয়াতের মাধ্যমেই সুরা আল-বাক্বারাহ সমাপ্ত করা হয়েছে। যেই ঘরে তিন রাত সুরা বাক্বারার শেষ দুইটি আয়াত তেলাওয়াত করা হয়, শয়তান সেই ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।” তিরমিযীঃ ২৮৮২, আল-হাকিমঃ ২০৬৫, হাদীসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
একদিন জিবরাঈল আ’লাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপরের দিকে একটি আওয়ায শুনতে পেয়ে তিনি নিজের মাথা তুললেন এবং বললেন, “এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজই খুলে দেওয়া হল; আজকের দিন ছাড়া কখনও তা খোলা হয়নি। এখন সেই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন। তিনি বললেন, তিনি এমন একজন ফেরেশতা যিনি পৃথিবীতে অবতরণ করলেন, আজ ছাড়া অন্য কোন দিন তিনি অবতরণ করেননি। এরপর সেই ফেরেশতা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দিয়ে বললেন, “আপনি দুইটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু আপনার পূর্বে অন্য কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। তা হলো সুরা ফাতেহা এবং সুরা বাক্বারার শেষ অংশ। এই দুইটি নূরের যে কোন হরফ (দুয়া) আপনি পাঠ করবেন, তা আপনাকে দেওয়া হবে।” সহীহ মুসলিমঃ ১৭৬০।
সুরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াতের শানে নুযূলঃ
সাহাবীরা কুরআনের প্রতিটা আয়াত গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের জীবনের সাথে বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী ছিলেন। সহীহ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, অনুচ্ছেদ-৫৮, ২৩৭নং হাদীসে সাহাবীদের অন্তরে ঈমানের প্রতি দৃঢ়তা ও আনুগত্যের সুন্দর উদাহরন ফুটে উঠেছে! মহান আল্লাহ ঈমানদারদের কত সন্নিকটে, কত মহান দয়ালু তার নমুনাও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এই আয়াত নাযিল হলো, “আকাশ সমূহে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর। তোমরা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করো বা লুকিয়ে রাখো, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। তারপর তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন, এটা তাঁর ইচ্ছার অধীন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর সর্ব-শক্তিমান।” সুরা বাক্বারাহঃ ২৮৪।
সাহাবীদের কাছে এই আয়াত বড়ই কঠিন মনে হলো। তাই তাঁরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল আমাদেরকে সালাত, সাওম, জিহাদ, সাদকা ইত্যাদির বোঝা চাপিয়া দেয়াও হয়েছে, যা আমাদের জন্য এমনিই কষ্টকর। আবার এখন আপনার উপর এই আয়াত নাযিল হয়েছে, যা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তাহলে কি তোমরা পূর্ববর্তী দুই কিতাবধারী সম্প্রদায় (ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের) মতো বলতে চাও? যেমন তারা বলেছিল, “আমরা আদেশ শুনেছি, কিন্তু মানবনা।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ৯৩। বরং তোমরা বলো, আমরা আদেশ শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমার কাছে গুনাহ মাফ করার জন্য প্রার্থনা করছি। আর আমাদেরকে তোমার দিকেই ফিরে যেতে হবে।”
যখন সাহাবীরা আয়াতটি পড়ে নিলো এবং তাদের অন্তরেও এর দাগ কাটলো, মহান ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআ’লা এর পরক্ষণেই এই আয়াত নাযিল করলেন,
“রাসুল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে, যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। আমাদেরকে তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” সুরা বাক্বারাহঃ ২৮৫।
অতঃপর যখন তারা পরিপূর্ণভাবে মনে-প্রানে এই নির্দেশ মেনে নিলেন, পরে তা আল্লাহ তাআ’লা ২৮৪ নম্বর আয়াত মানসুখ (রহিত) করে দিলেন, এবং নাযিল করলেন, “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায়, যা সে করে। (মুমিনরা বলে) হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করে।, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের মাওলা (প্রভু)। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে তুমি বিজয়ী কর।” সুরা বাক্বারাহঃ ২৮৬।
আল্লাহ তাআ’লা বললেন, “হ্যা”। অর্থাৎ (২৮৬ নাম্বারে উল্লেখিত) তোমাদের এই আরজি ও আরাধনা আমি কবুল করলাম।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবাইকে কুরআনু কারীমের এই বরকতময়, সম্মানিত আয়াত দুইটি পাঠ করার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত মুসিবত, বিপদ-আপদ, রোগ-শোক অতিক্রম করে শান্তিময় ও সুখের জীবনলাভে ধন্য করুন। আমিন।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি