মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্ত এলাকায় মাদক, মানবপাচার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে অতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রতিবাদ সভা করেছে। ভারতের সীমান্তবর্তী উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাঘাট বাজার এলাকায় সম্প্রতি উক্ত প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় ছাত্র, যুবক ও এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ উক্ত সভায় উপস্থিত থেকে এসব অপরাধ ও অপকর্ম রোধে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নেন। তারা এসব বিষয়গুলো কঠোর হাতে দমন করতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে মানবপাচার ও চোরা চালানের দৌরাত্ম্যে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় তা বন্ধের দাবিতে গত মঙ্গলবার স্থানীয়রা এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
পরে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে লিখিত অভিযোগ আকারে গত শনিবার (১৯ শে অক্টোবর) বিজিবি’র শ্রীমঙ্গল সেক্টর কমান্ডার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প প্রধান, কুলাউড়া থানা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক, কালারায়ের চর, চাতলাঘাট, দত্তগ্রাম, হরিপুর, সঞ্জরপুর, ইটারঘাট সীমান্ত ঘেঁষা এইসব গ্রাম দিয়ে বিভিন্ন সময়ে অবাধে চোরাকারবারিরা মাদক ও মানবপাচার করে আসছে। বিশেষ করে মনু নদীর ওপারের ন’মৌজা অঞ্চলের লালারচক গ্রাম ও চাতলাঘাট ঘিরে মাদক ও মানব পাচারের বৃহৎ সিন্ডিকেট রয়েছে। এরই সাথে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ডাকাতিও বেড়ে গেছে। আমরা আতঙ্কে থাকতে চাই না। প্রশাসনসহ স্থানীয় জনগণ এইসব রোধে কাজ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, আমরা এইসব অপকর্ম দীর্ঘদিন থেকে সহ্য করেছি, আর নয়। গুটি কয়েক ব্যক্তির অবৈধ স্বার্থের কারনে পুরো শরীফপুর অঞ্চল কলঙ্কিত হয়। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। চিহ্নিত কিছু চোর-ডাকাত, মাদক ও মানব পাচারকারীর কাছে আমরা জিম্মি হতে পারি না।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক মইনুল ইসলাম বলেন, এসকল অপকর্মের সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে এই পথ ছেড়ে দিয়ে হালাল ও সৎ উপায়ে আয় রোজগারের পথে আসতে হবে। আর অপরাধী যেই হোক, যত প্রভাবশালী পরিবারের লোক হোক আইনের আশ্রয়ে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জুনাব খাঁন বলেন, সর্বোচ্চ ৪০-৫০জন মানুষ এই অপকর্মে জড়িত। তাদের সাথে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার কাউন্সিলিং করে সু’পথে ফেরার আহ্বান জানালেও তারা ফেরেনি। তাদের জন্য পুরো শরীফপুর অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বদনামের খাতায় নাম লেখানো হচ্ছে, এহেন কর্মকাণ্ড হতে পারে না।
মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেন, সন্ধ্যা হলেই এলাকার চিত্র অন্য রকম হয়ে যায়। গাড়ি, মোটরসাইকেলে মাদক সেবিরা এসে মাদকদ্রব্য সেবন করে বোতল রাস্তায় ফেলে যায়।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসার আশ-পাশ থেকে প্রতি সপ্তাহে বোতল পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। কিছু দিন আগে লালারচক সীমান্তে মানব পাচারকারীরা অবৈধভাবে কিশোরী স্বর্ণা দাসকে ভারতে পাঠাতে গেলে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে স্বর্ণা নিহত হয়। এই বছরের শুরুর দিকে ফেরদৌস নামের আরেক কিশোর মাদক পাচারের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। প্রতিবাদ সভায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলীর সভাপতিত্বে ও হামিয়ুস সুন্নাহ চাতলাঘাট মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল জব্বাবের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন চিনু,সমাজসেবক জামাল উদ্দিন, ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজিজুল হক দুরুদ, ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার লাল মিয়া, সাবেক মেম্বার হারুন মিয়া, সমাজসেবক নজরুল ইসলাম, এডভোকেট আব্দুল্লাহ আলমগীর, দুলাল মিয়া, ফিরোজ মিয়া কালা, মুক্তার আলী, চাতলাঘাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক জুনাব খাঁন, চাতলাঘাট সিএনজি সমিতির সম্পাদক ইব্রাহিম উদ্দিনসহ বাজারের ব্যবসায়ীরা সভায় বক্তব্য রাখেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, সীমান্তে সব ধরনের অপরাধ রোধ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় সকলের ঐক্য ও প্রয়াস প্রয়োজন। সীমান্তের বিষয়ে আমাদের সম্মিলিত তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আমরা স্থানীয় জনগণেরও সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। সকলের সহযোগিতায় থাকলে এসব অপকর্ম রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
আজ ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:২২ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি