আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনকালের অবসান হলো সিরিয়ায়। রবিবার দামাস্কাস ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।
এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স সিরিয়ার দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে গেছেন।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা এই অভিযানের নেতৃত্বে আছে তাদের টেলিগ্রাম হ্যান্ডেলে বলেছে, এর মাধ্যমে একটি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছে এবং এক নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে, দামেস্কের পথে পথে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের জের ধরে সিরিয়ার বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে তা রুপ নেয় গৃহযুদ্ধে। রাশিয়া আর ইরানের সমর্থনপুষ্ট বাশার আল আসাদ নিজের ক্ষমতা অনেকটা সংহত করে রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া নতুন লড়াইয়ে একের পর এক বড় বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় সরকারী বাহিনী।
হোমস থেকে সিরিয়ান সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পর হাজারো বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসে। তারা নাচতে নাচতে স্লোগান দিতে থাকে, ‘আসাদ শেষ, হোমস মুক্ত’ এবং ‘সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক, বাশার আল-আসাদ নিপাত যাক।’ বিদ্রোহীরা আকাশে গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে। তরুণেরা আসাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।
বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেছে, তারা রাজধানীর উত্তরে কুখ্যাত সাইদনায়া সামরিক কারাগারে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে তাদের বন্দিদের মুক্ত করেছে।
সিরিয়ার সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী দামেস্ক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে, বিদ্রোহীরা রাজধানীতে তীব্র আক্রমণ চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে একটি যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা রোববার এ খবর জানিয়েছে।
এছাড়া ব্রিটেন-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের সূত্র জানায়, সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈন্যরা দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, কারণ রাজধানীর বাসিন্দারা এএফপিকে বলেছেন, তারা শহরে গুলির শব্দ শুনেছেন।
১৯৭০ সালে সামরিক বাহিনীর জেনারেল হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেন।
হাফিজ শক্ত হাতে তিন দশকের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেন। তিনি সিরিয়াকে ক্রমেই মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে নিতে থাকেন।
নিজের গোত্র আলাওয়াতিদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন। গোটা দেশে নিজের ধ্যান ধারণা আর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা প্রচার করার পাশাপাশি নিজের ক্ষমতাও অনেক বাড়িয়ে নেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে হাফিজ আল আসাদের কনিষ্ঠ ছেলে বাশার আল আসাদ প্রায় দু যুগ ধরে স্বৈরাাচারি কায়দায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম